ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Friday 3 August 2018

অভিমান (অণুগল্প)

অভিমান
~স্বেতা আইচ


আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল অভীক। তাড়াতাড়ি মানে রাত ১০টা আর কি। শ্রীময়ী কে সারপ্রাইজ দেবে। অনেকদিন পর……
বছর খানেক হতে চলল অভীক আর শ্রীময়ী সাতপাকে বাঁধা পড়েছে। কলেজের প্রথম দিন থেকে আলাপ, থুড়ি ভালো লাগা। সেই হিসাবে লাভ ম্যারেজ ই বলা যায়। শুধু প্রেম নয়, বলা যায় ওদের সম্পর্ক যেন এক দৃষ্টান্ত। দুজনেই ওয়েল এস্ট্যাবলিস্ড যাকে বলে ( এম এন সি তে কর্মরত, মোটা টাকা বেতন, নিজেদের ফ্ল্যাট, গাড়ি, গুড সেভিং…….)। কোন কিছুর ই যেন অভাব নেই ওদের পুঁচকি সংসারে। অন্তত ওরা তেমন টাই ভেবেছিল।
এতো গেল অতীত। এবার বাস্তবে আসা যাক। বিয়ের পর প্রথম প্রথম বেশ ভালো ই চলছিল। হানিমুন কাটিয়ে ফেরার পর থেকেই যত বিপত্তি। ব্যাপারটা একটু খুলে বলা যাক।
বিয়ে ও হানিমুন মিলিয়ে মোটামুটি ১৮ দিনের লম্বা ছুটি কাটিয়ে এসে দুজনেই যখন কর্মজীবনে ফিরে গেল, তখন ওরা নিজেদের একরাশ কাজের মধ্যে খুঁজে পেল। একটা করে দিন পেরোল, কাজের চাপ যেন পুকুর নদী পেরিয়ে মাঝ সমুদ্রে এসে পড়ল। ছুটির দিনগুলো কোন ফাঁক দিয়ে গলে যেতে লাগল তা টের ই পেল না অভীক ও শ্রীময়ী। সারাদিন শেষে দুজনে ঘরে ফেরে শুধু এটুকুই। একটা সময় দুজনে দুজনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সবরকম পরিস্থিতিতে একসাথে পাশাপাশি থাকবে। তাই ই তো চলছে, সকাল ৮টা টু রাত ৮টা।
আজ, ১৭ই এপ্রিল…ঘড়িতে ১০টা বাজল। শুক্রবার আজ, শ্রীময়ীর আগে ফেরার কথা। অভীক বেল বাজালো, আওয়াজ টা কতদিন পর যেন শুনলো। মাস্টার কী এর দৌলতে ওটার ব্যবহার তো প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একবার, দুবার, তিনবার। বেলটা কি তবে খারাপ ই হয়ে গেল ? না ! ভিতর থেকে আওয়াজ তো আসছে। তাহলে শ্রী নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে কি ও আজকের দিনটা ভুলে গেল? মনের মধ্যে একটা ব্যথা অনুভব করল অভীক। এতটাই কি দূরে সরে গেছে ওরা একে অপরের থেকে?
কিছু সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল অভীক। আবার বের বাজালো। নাঃ, কোন সাড়া শব্দ নেই। অগত্যা পকেট থেকে মাস্টার কী বের করে দরজা খুলে ফেললো। ড্রইং রুম টা অন্ধকার কেন? ও তো ভেবেছিল সারা ফ্ল্যাট জুড়ে আজ আর আলো থাকবে শুধু। কিন্তু কিছু ই যেন অভীকের মনের মতো হচ্ছে না আজ। বেডরুমে আলোটা জ্বলছে, তারমানে শ্রী ভিতরেই আছে। কিন্তু দরজা টা তাহলে খুলল না কেন? একরাশ প্রশ্ন বুকের মধ্যে নিয়ে অভীক ঘরে ঢুকল ঠিক ই কিন্তু এত তাড়াতাড়ি উত্তর গুলো পেয়ে যাবে আশা করেনি। বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে শ্রীময়ী। তবে এই পস্তাতে শ্রী কে আগে কখনো শুতে দেখেনি অভীক। অনেক বার ডাকলাম, সাড়া নেই। পার্স চলছে। শ্রীময়ী সেন্সলেস।
“আপনি সত্যি কিছু জানতেন না?”
“ট্রাস্ট মি ডক্টর, আই ডোন্ট নো এনিথিং অ্যাবাউট ইট!”
“এই হচ্ছে আপনাদের জেনারেশনের সমস্যা। সারাদিন শুধু কাজ নিয়েই থাকতে জানেন। দুটো মানুষ তাও ঠিক ঠাক খোঁজ খবর রাখেন না !”
মাথা টা নীচু হয়ে গেল অভীকের। সত্যি ওর বলার কিছু নেই। দুটো মানুষ পাশাপাশি থেকে ও এতটা দূরে কিভাবে সরে গেল বুঝতে ই পারেনি। জীবনের সবথেকে বড় খুশির খবর টা ও কিনা সে এভাবে পেল? হ্যাঁ, খুশির খবর ই তো! অভীক যে বাবা হতে চলেছে।
কেবিনের জানলার দিকে তাকিয়ে শ্রীময়ী। অভীক পাশের চেয়ারে চুপ করে বসে। একটা অসহনীয় নিস্তব্ধতা গোটা রুম টা জুড়ে। অভীক ই প্রথম স্তব্ধতার দেওয়ার ভাঙল,
“আমরা কি এই দিন টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম দুজন দুজনকে, শ্রী?”
“কতদিন পর শ্রী ডাকটা শুনলাম তোমার মুখে!”, অবশেষে কথা বলল শ্রী।
“এমনটা কেন হল শ্রী? কেন তুমি আমাকে এত খুশির খবর টা আগে দিলেনা? বলো কেন?”, শ্রী এর হাত টা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিল অভীক।
নিজেকে আর সামলাতে পারল না শ্রীময়ী। ভরা বর্ষার মেঘের মতো ঝরে পড়ল অভীকের শরীরে। দুহাতে জাপটে ধরল ওর ভালোবাসার মানুষটি কে। শেষ কবে এ আলিঙ্গন পেয়েছে অভীক জানে না। নিজের সবটুকু দিয়ে শ্রীময়ীকে আগলে রাখার নতুন প্রতিশ্রুতি টা মনে মনে নিয়ে নিল সে।
অভিমান, হ্যাঁ এটাই অভীক আর শ্রীময়ীর ছেলের নাম। কার্ডে তেমন টাই লেখা আছে-“ অভিমানের ১বছরের জন্মদিন উপলক্ষে আপনাদের নিমন্ত্রণ রইল।” খুব খুশি ওরা এখন। অভিমান যেন ওদের সকল অভিমানের প্রাচীর কে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। এখন ওরা পালা করে অভিমানের দায়িত্ব নিতে শিখেছে। নো একস্ট্রা টাইম ইন্টারনেট অফিস, একসেপ্ট হোম। অভিমান ওদের কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড থেকে ব্রেক নেওয়ার কারণ তো বটেই, সাথেই বেঁধে রাখার সুতোও এখন সে।
কখনো কখনো অভিমান যেমন দূরত্ব বাড়ায়, তেমন সব দূরত্ব মিটিয়ে দুটো মানুষ কে কাছাকাছি ও এনে দিতে পারে।
তাই সব সম্পর্কের আড়ালে কখনো কখনো কোথাও না কোথাও অভিমান থাকাটা শুধুমাত্র দরকার নয়, ম্যান্ডেটরি ও বটে।


Name- Sweta Aich
Address - Baranagar, Kolkata.



No comments:

Post a Comment

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি