ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Friday 29 June 2018

আস্থাহীনতা

"আস্থাহীনতা"
-------------------
রবিউল ইসলাম মন্ডল
ঢেউ , ফ্যানা, মাকড়সার জালে
আস্তা নেই
ওতো ক্ষণস্থায়ী তাসের ঘর ‌।
কৃত্রিমতায় ভরা
ভালবাসায় অনাস্তা
ওতো বালির বাধ।
ধস নামছে মনে ক্রমাগত
মানুষের চাটুলতায় ।
সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব
নিজ স্বার্থ পূরনের তরে
বানিয়েছে খেপনাস্ত্র,
পরমানু বোমা ।
নিক্ষেপ করছে নিরীহ মানুষের উপর। 
ইস !  হায়, হায় !
       এত বিবেকহীন ?
অবলা প্রাণীও আক্রমন করে
সে তো উদরের ক্ষুধা নিবৃতির তরে। 
ঈশান কোণে ঘন মেঘের ঘনঘটা
হৃদয় শূন্যতায় ভরা ।
কপোল ভাসিছে অশ্রু জলে
ঘরে ঘরে প্রস্তুত মানব সংগ্ৰামের তরে।
আজ এ শূন্য হৃদয়ে শুধু
আঘাত হানিছে বারবারি-
হিংসা যেদিন যাইবে দুনিয়া ছাড়ি
সব তরবারি হইবে সেদিন কাষ্ঠের তরবারি।
রবিউল ইসলাম মন্ডল
শিক্ষক,
ভবানীপুর, উত্তর 24 পরগনা,

দিবাকর মন্ডলে'র দুটি কবিতা

১) ভাগাভাগি

~দিবাকর মন্ডল

 

সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে

একান্নবর্তী পরিবার থেকে দেশ,

চাঁদ- মঙ্গল’ এর মাটিও নিস্তার পায়নি

ভাগ হয়ে গেছে শেষমেশ।

 

ভাগ হয়ে গেছে মানুষ

হিন্দু- খ্রিষ্টান- মুসলিম- বুদ্ধ- শিখ,

ভাগ হয়ে গেছে আহার- বিহার, সংস্কৃতি

একজনার কাছে ঠিক আর একজনার বেঠিক।

 

ভাগ হয়ে গেছে রাজার আদেশ

বহুদলীয় রাজনীতি

দলের মধ্যে দলাদলি

লক্ষ থেকে বিচ্যুতি।

 

ভাগ হয়ে গেছে শরীর

ধর্মের মড়কে জব্দ,

যখন ধার্মিক বলে, ধর্ম আমার প্রকাশ্যে নয়

অন্তরে উপলব্ধ।

 

আসলে সবাই বাঁচে নিজের জন্য

সবার জন্য নয়,

তখন থেকেই ভাগ হয়েছে

নাম-ধাম- পরিচয়।

 

মন্দির- মসজিদ’ এ ভিড় জমেছে

নেই শুধু ঈশ্বর,

মনের ভিতর দৈববানী

আমাকেও ভাগ কর।

 

পূজা- পার্বণ, আজান- প্রার্থনা

সবকিছু আজ বৃথা,

কারণ ভাগাভাগি করে হাতে তুলেছি

কোরান- বাইবেল- গীতা।  



২)গোপন  

 

সুর হল ঝর্ণাধারা

স্নানের ঘরে জলের ফোয়ারা,

তোমার নগ্ন শরীর ভিজছে চেয়ে

রূপে-গুণে অপ্সরা।

 

কথা হল জলের কণা

তপ্ত শরীর নিয়ে আলোচনা,

তোমার ছোঁয়ায় পুড়ছে কথা

সুর তাই বাস্পকণা।

 

গানে তাই ঝরছে আগুন

চোখের পাতায় ছুঁয়েছে ফাগুন,

জোয়ার এসেছে নদীর জলে

পাহাড় ঢেউ খাচ্ছে দারুণ।

 

আমি গান বাঁধব না

কাউকে কিছু বলব না,

মুহূর্তটা গোপন থাক

উত্তেজনা বাড়াব না।     



অসীম মালিকে'র দুটি কবিতা

১) নির্জন,পোড়োবাড়ি
  ~ অসীম মালিক

মেয়েটি একা থাকতে থাকতে হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে ,
নির্জন ঘরটির নিদারুণ যন্ত্রণা ....
ছেলে টিউশন সেরে স্কুল চলে গেলে ,
রিডিংরুমটা চেয়ারে,টেবিলে ছড়িয়ে দেয় নির্জনতা ।
শোকেসে সাজানো পাঠ্যপুস্তকগুলি
                      যেন হোমটাস্ক খুলে বসে ।
ক্লান্ত মানুষটা যখন রাত ন 'টায় বাড়ি ফেরে ,
মেয়েটির একাকীত্ব ওষ্ঠ ছুঁতে চায় ;
জানলা তাকে চাঁদ দেখায়
              দরজা দেখায় অজস্র রাস্তা ...
                        মেয়েটি আজ নির্জনতার ভাষা ।
ঘরে অনেক কিছুই আছে ,
        কিন্তু কথা বলার মানুষ নেই ।
                 যেন মেয়েটির একাকীত্ব
                            আজ নির্জন ,পোড়োবাড়ি .....
নিংসঙ্গ মেয়েটি পড়েছে অনাবৃষ্টির শাড়ি ।
--------------------------------------------------------------------

২)খেলনাবাড়ি
   ~  অসীম মালিক

এয়ারগান থেকে গুলি এসে লেগেছে ,
খেলনাবাড়ির কয়েকজন ছেলেকে ।
আলতারাঙা রক্তে ভিজে গ্যাছে ---
খেলনাবাড়ির জামাকাপড় ,আসবাবপত্র....
ছেলেখেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে ---
রাজসভার মন্ত্রমুগ্ধ কবি ।
শোকপ্রস্তাব নিয়ে হাজির খেলনা বাড়ির রাজা ।
'বন্ধুগণ ,এয়ারগানের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন ,
তাদের জন্য আমরা দুঃখিত , আমরা ব্যথিত । এই পুতুলবাড়ির ছেলে খেলায় , যারা প্রিয়জনদের হারালেন । তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই । 
আমরা যা পারি তা হল , এককালীন ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করে , স্বজনহারা শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই । '
নিষিদ্ধ সাংবাদিকের মগজ সেবন করে
আমি আঁচ পেয়েছি --
এই খেলনাবাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েছে ---
আমার স্বপ্নে দেখা ভারত ।
খেলনাবাড়ির রাজসভায় আমিও তন্দ্রাচ্ছন্ন ,
ব্ন্ধু ,আদেও আমার ঘুম ভাঙবে কিনা জানিনা ।
কিন্তু ,ঘুম ভাঙাটা খুব জরুরী !
------------------------------------------------------------------------
পরিচিতি ::--হুগলি জেলার আরামবাগের এক প্রত্যন্ত গ্রাম শীতলপুর । এই গ্রামেই 14 ই জানুয়ারী , 1983 সালে এক দরিদ্র পরিবারে  জন্ম । জেদ এবং অধ্যবসায়ে ইংরেজিতে স্নাতক ।  বর্তমানে পেশায় একজন শিক্ষক । ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি অসীম আগ্রহ ও হাতেখড়ি ।  আজ পর্যন্ত যা সচল । প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় কবি দেবাংশু চক্রবর্তী সম্পাদিত ' দ্য তথ্যায়ন'  পত্রিকায় । প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পেন্ডুলামটা দুলছে'।  যা 2008 সালে প্রতিভাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশ প্রকাশ পায় । সৃজন , মানভুম সংবাদপত্র ,  ,আর্থিক লিপি , দৈনিক যুগশঙ্খ , ঈশ্বরকণা , শ্রীময়ী , বৈঠকি আড্ডা , শব্দ সাঁকো ,  কলেজস্ট্রীট , উদ্ভাস , সময় সংকেত এবং দৈনিক বজ্রকন্ঠ (ত্রিপুরা ),ধানশালিক (বাংলাদেশ ), প্রভৃতি পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে । প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায় । লেখার অনুপ্রেরনা কবি ও ছড়াকার সাধন বারিক ।  ভালোবাসি ছবি আঁকতে এবং ভ্রমণে যেতে ।



...

অনুভবে

অনুভবে
      ~  বরুন কুমার আড়ী


বিধ্বংসী মরুঝড়ের পরিশ্রান্ত দিনে,
   এঁকেছিলেম আবেগে
   আসবে তুমি নিঃশব্দে
ঝরে পড়া বকুলের শুন্য এ অঙ্গনে।
হঠাৎ যখন বৃষ্টি নামে,আবেগরা হয় কঠিন।
তোমারই পথে এ চোখ তবু, আসেনি আলাদীন।
বানভাসি এ মন যেন হারিয়ে ফেলে সুরকলি।
শরৎরুপে আসবে তুমি, আনবে প্রাতের অঞ্জলী।
কৃষ্ণপক্ষের যাতনা আর বোঝেনা অবুঝ মন,
তোমার দেশের আলোর বাতি দেয়নি অনুক্ষণ।
ত্রিতাল আর ভৈরবী রাগ বাজেনি কোনো সাঁঝে।
নিদ্রাবিহীন প্রশ্ন আমার,এ কোন 'ঋতুরাগে'..!


ঈশ্বর

ঈশ্বর
~রিয়ানো

তুমি হচ্ছো ফায়ারপ্লেসের আগুন!
মর্মর ধ্বনি তুলো,আর
সবকটা কাঠের টুকরো হয়ে যায় চৌচির!
আমি বিভ্রান্তিতে পড়ে রই-
রাতের শেষভাগে,আমাকে তুলে দেয়া   হয়েছে                                            জ্বলন্ত চুল্লিতে।
জীবন্মৃতদের দলে এখন আমি নাম  লেখাবার অপেক্ষায়
আমার গোটা দেহ গলে গলে পড়ছে,
আর ফেরেস্তারা আমায় করেছে পরিত্যাগ!
লেখক: রিয়ানো
ঠিকানাঃ দক্ষিণ মাসদাইর,ছোটো গোরস্তান,ফতুল্লা,নারায়ণগঞ্জ।



সিদ্ধান্ত

 সিদ্ধান্ত
~ মোহাম্মদ তানসীরুল আলম


একটি নির্বাক মুহূর্তের নির্বাচন করে যাই পারিপার্শ্বিকতা মেপে।
সিদ্ধান্তের ধাপে ধাপে পা ফেলে যাই। 
দুর্বল পা, দুর্বল তার চিহ্ন, দুর্বল তার সমস্ত চেতনা, দুর্বল তার বেশভূষা।
পাখির ঠোঁটের মত তীক্ষ্ণতা নিয়ে সিদ্ধান্তের ভিত্তি রচনা করেছিলাম।
তীক্ষ্ণতা নেই তাতে, হয়ত ছিলও না কখনও।
আছে আনাড়িপনা, আছে অজস্র অসারতা।
আছে সিদ্ধান্ত না নিতে পারার যন্ত্রণাটুকুও।
যেন আমার উপর কেউ হাত চালিয়ে যাচ্ছে, আমার যেন কিছু করার থেকেও কিছু করার থাকছে না।
না, আমি তাদের দলে নই,
যারা এই পৃথিবীকে স্রষ্টার রঙ্গমঞ্চ বলে,
যারা এই পৃথিবীর মানুষের জীবনপ্রবাহের কথকথাকে পুতুলনাচের ইতিকথা'র চার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করে নেয় এক দারুণ পরিহাস নিয়ে।
আমি হলাম মানুষ, নই ফেরেশতা।
আমার নিজস্বতা আছে, স্বাধীনতাও আছে।
কারণ, আমার স্রষ্টা আমায় তা দিয়েছেন।
তবে আমার নিকটের মানুষগুলো তা আমায় দেয়নি।
চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের দমবন্ধ প্রকোষ্ঠের মাঝে,
আমাকে না চাইতেও শুয়েবসে থাকা লাগে।
পরনির্ভরশীলতা হতে বাঁচতেই,
এতগুলো সমস্যা নিয়েও হাত পাতছি না কোনো কাগুজে মূল্যপ্রাপ্তির ভিক্ষের আশা নিয়ে।
বয়সের প্রাপ্তির ন্যায় সময়ের প্রাপ্তিটুকুর অপেক্ষায়,
বেরিয়ে পড়বো।
না, দু'চোখ যেদিকে যায়, সেদিকে নয়,
বরং যেদিকে যাওয়া উচিত ছিল সেই বহু বছর আগে থেকেই,
সেদিকেই।
সৃজনের যে ক্ষমতাটুকু আমার স্রষ্টা আমায় দিয়েছেন,
তা সাজিয়ে,
গুছিয়ে,
আবেগ মাখিয়ে,
বাস্তবতার প্রলেপ লাগিয়ে,
কাগজের বা মুঠোফোনের পর্দায়,
পিষে বা স্পর্শে,
আমি প্রকাশ করে যাব আমার অনুভূতি।
তাতেই প্রকাশ পাবে,
আমার বিভিন্ন সময়ের গতি।
হয়ত বছরখানেক বাদেই ঘুরেফিরে চোখে পড়বে এই লেখাটি।
তখন কেমন বাস্তবতায় থাকবো, তা জানা নেই।
তবে পুরোপুরি না হোক, অন্তত কিছুটা হলেও অনুভবে টানতে পারবো,
এই লেখা লেখাকালীন অনুভূতির পাতার প্রতিটি প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস, হেঁটে চলা, ভেবে নেয়া, চেয়ে দেখার প্রহরটুকুকে।
মেঘশূন্য, তবে তারাময় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,
যা সূর্যোদয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে চলমান আছে।
ঠিক আমার এক প্রিয় মানুষের মতই মাথায় ভাবনা আসছে,
"What will I do in future?"
"What will happen to me then?"
হতাশ নই, তবে শঙ্কিত,
আর দশটা ভাবুক ছেলের মতই,
আর দশটা মানুষের মতই,
যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা হারিয়েছে।


নাম : মোহাম্মদ তানসীরুল আলম
ঠিকানা : লতিফপুর, জাফরাবাদ, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।


সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি