ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Friday 18 May 2018

একটি শহুরে রাত এবং বৃষ্টি (মুক্তগদ্য)

একটি শহুরে রাত এবং বৃষ্টি।
~ অনামিকা দত্ত

একটানা বৃষ্টি হওয়ার পর সবে বৃষ্টিটা একটু থামলো।ঘরটা গুমোট হয়ে আছে,গোড়ালি উঁচু করে জানলার ছিটকিনি খুলে দিতেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া সবেগে শরীরে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ঢুকে এলো।সেই হাওয়ার মিশে আছে ভেজা মাটির গন্ধ।চোখ বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ সেই গন্ধ অনুভব করতে চায় মন।কানে আসে কোথাও কার্নিস বেয়ে বা ল্যাম্পপোস্টের তার থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল মাটিতে পড়ে টুপটাপ ধ্বনি তুলছে, পাতার খাঁজে সঞ্চিত জল গড়িয়ে পড়ছে শব্দ করে।কিছু কুকুর কাক ভেজা হয়ে গা ঝাড়া দিচ্ছে,সব শব্দই কানে আসছে।আকাশের বর্ণ কালচে লাল,রাতের আকাশে মেঘ জমলে আকাশটা এমনই লালিমায় ভরে ওঠে।

একটানা মুষল ধারায় বৃষ্টিতে পথে লোকজন ছিল না, সব কোলাহল যেন গিয়েছিল থেমে।নতুবা মেঘের গর্জনে,বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে মিশে গিয়েছিল। তবে বৃষ্টি ধরে যেতে পথের মানুষ পথে নেমেছে,যা গিয়েছিল থেমে তা পুনরায় হল শুরু।লোকজন বাড়ে,বাড়ে কোলাহল, বাড়ে শব্দ ;হারিয়ে যায় শুধু বৃষ্টি ভেজা টুপটাপ আর ঝমঝম ধ্বনিগুলি। যা শুনতে পাই সে বড় সাধারণ, কানে লাগেনা তেমন।কান শুনতে চায় সেই চুঁইয়ে পড়া জলের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। যেই মৃদু ধ্বনির ঝংকার আলোড়ন তোলে মনে। খুঁজে বেড়ায় ভেজা মাটির সেই অকৃত্রিম গন্ধখানি।

ততক্ষনে সেই লাল মেঘের দল কোথায় কতদূর গেছে ভেসে।এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে, নগরীর কুৎসিত আবর্জনাগুলোকে ধুয়ে,মুছে ভাসিয়ে দিয়ে সে নিজেও কোন নাম না জানা দেশে পাড়ি দিয়েছে কে জানে। গ্রীষ্ম দহন তাপে ঝিমিয়ে পড়া গাছগুলোর গোড়া জল পেয়ে যেন সজীব হয়ে উঠেছে, আবার বৃষ্টির রুদ্ররূপের দোলায় কিছু গাছের শিরদাঁড়া বেঁকেছে।

আকাশে আর মেঘ নেই,ঝলমলে আকাশে চাঁদ হাসছে,তারা ঝিকমিক করছে।তবে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো এখনো শুকোয়নি; তাই তো সেই ফোঁটাগুলির ওপর বিরাট আকাশটার ছায়া পড়ে হাজারটা চাঁদ-তারা যেন পৃথিবীতে নেমে এসেছে।এখন যদি  একটিবার সারা শহর বিদ্যুৎ চ্যুত হয়,সারা শহর দেখত তারাদের এমন পৃথিবীতে নেমে আসার কাহিনি। কিন্তু এমন কৃত্রিম আলোয় ঝলমলে শহরে, হাজার কোলাহল-ব্যস্ততার মাঝে আমার মত আর কি কেউ এমন করে দেখছে চাঁদ-তারাদের পৃথিবীতে নেমে আসার অদ্ভুত গল্প।।

অনামিকা দত্ত
ঠিকানা- ইছাপুর মাঝের পাড়া হাওড়া -৭১১১০৪

রাতের রোজনামচা (অণুগল্প)

রাতের রোজনামচা
~সবনম

রাতের পর রাত ছেলেটা মুখে বালিস চাপা দিয়ে জোড়ে আওয়াজ করে কাঁদে, যাতে কেউ শুনতে না পায়। তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়ে, যেমন সবাইকে চোখ বন্ধ করতে হয় তেমনই। এর আগেও  যখন ওর মা চলে গিয়েছিল ও কেঁদেছিল, এভাবেই বালিশ চাপা দিয়ে বহুদিন কেঁদেছিল।

এখন ওর বয়স একুশ বছর এখন আর মার জন্য ততটা কষ্ট হয়না, কারন জীবনে নারীর অনেক রুপ, ও এমন কাউকে পেয়েছে যার পরশ পেলে মনে হয় সব কষ্ট যেন একটা ঝাপট দেওয়া বৃষ্টি এসে ধুয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু বেশ কয়েকদিন হল মেয়েটি ওকে ছেড়ে চলে গেছে, ও টের পায় ওর ব্যাথাটা আরও তীব্র রুপ ধারন করছে, তাই ও বালিশ চাপা দিয়ে কেঁদে যায় শুধু।

শেষ রাত্রে ওর ঘুমের ভিতর মেয়েটা ওকে পরশ করে যায়, তারপর হুট করে উঠে দাঁড়ায় চলে যাবে বলে, বলতে থাকে-"কাল সকাল থেকে আমাদের আর কথা হবেনা।" তখন ও হুড়মুড় করে উঠে বলে, "তবে যে কথা দিয়েছিলে?"
-ওরকম কত কথাই তো আমরা দিয়েছি, কথা রাখার কোনো কথা ছিল নাকি?
-ছিল না?
-ভেবে দ্যাখো বরং।

তারপর ওর ঘুমটা ভেঙে যায়। আবার বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদার রাতের আর একটা দিনের শুরু।

বর্ধমান, হুগলী

ছায়াহীন


।।ছায়াহীন ।।
দীপঙ্কর পাড়ুই

মাথার ওপর থেকে ছায়া চলে যায়
মাথার ওপর থেকে ছায়া চলে যায়
মানুষ কাঠপুতুলের মত
মানুষ কাঠপুতুলের মত
অবস্থানে চলে আসে
ছায়াহীন মানুষকে নানাভাবে বেচে বর্তে থাকতে হয়।
আকন্ঠ জড়িয়ে থাকা মাতৃত্বের স্বাদ
                                 পিতৃত্বের স্বাদ
                                   স্বাদহীন হয়।
মাথার ওপর থেকে ছায়াহীন হলে
                           মানুষ অচল হয়।      


              

রাতের কোলকাতা বনাম রাবনের লঙ্কা

রাতের কোলকাতা বনাম রাবনের লঙ্কা -
~ইন্দ্রাণী ঘটক

" রাতের কলকাতা?সে কি গা?"
সত্যি ই জানে না পাড়া গাঁ এর ছোট্ট সীতা।
তার দৌড় তো ওই 'খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার'
তবে যখন ই পেয়েছে ছুটি-
হেঁটে গিয়েছে বাঁধানো রাজপথ ধরে নাক বরাবর,মাইল ছ'টেক।
দুধারে সারি সারি গাছ,দু'রাস্তার মাঝে একটু জমিন-
এই দেখেছে সীতা দুচোখ ভরে,
আর দেখেছে- মেঘে মেঘে সিঁদুর খেলে ডুবতে থাকা সূর্য -
এই তো তার পৃথিবী,সে কি জানবে রাতের কোলকাতা।।
     হঠাৎ কোত্থুকে এল রাজপুত্তুর এক,নিয়ে হাজার স্বপ্নের ঝুলি,দেখাবে রাতের কোলকাতা।
খুশির জোয়ারে ভাসল সীতা,পা দিল স্বপ্নরাজ্যে।
কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল সেই রাজপুত্তুর?
কই তার রাজপ্রাসাদ? ফটক পেরিয়ে তার বিশাল বাগান?
কোথায় সে সব??
কোথায় যাবে সীতা?
স্বপ্ন রাজ্য ভেবে পা ফেলেছে রাবনের লঙ্কায়।
ফলও পেল হাতেনাতে,
রাত না ফুরাতেই খুবলে খেল তার শরীর লঙ্কাপুরীর নরপিশাচে,
হা ঈশ্বর! এই কি তবে 'রাতের কোলকাতা'?
এতো নয় কোনো স্বর্গরাজ্য-- এতো নরক।
জ্যন্ত পুতুলের চলে লুটপাট
বলি হয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নারী শাবক
ধিক্,ধিক্ তোরে কোলকাতা
সীতা যেথায় নিগৃহিতা,রাজ্যপাট দেখে রাবনরাজা।


          ইন্দ্রাণী ঘটক(দুর্গাপুর,গোপালমাঠ)



Thursday 17 May 2018

সভ্যতার অন্তরালে

সভ্যতার অন্তরালে
~তনিমা গাঙ্গুলী
কলকাতা তেও আছে ওই নিষিদ্ধপল্লির নাম
ওইখানে তেই যাও না বাপু মেটাতে তোমার কাম।
তারা যে আজ দেহ ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে
যদিও ওরা সমাজের কাছে পতিতা আখ্যা পায়।
তাই বুঝি তুমি এড়িয়ে চলো ওই বেশ্যা-র পিছু
ওও নানা তোমার তো চাই সদ্যজাত শিশু।
সাত-আট মাসের ছোট্ট শরীর,বৃদ্ধা কিংবা কিশোরী
আঠারো-কুড়ি যৌবন পালায় ডাগর যার শরীর।।
জনসমক্ষে ধর্ষণ কর, খুন ও কর তাকে
খুন আর করবে কী! সে তো অত্যাচারেই মরে।
দুদিন দুদিন মিটিং-মিছিল, ক্যান্ডেল-লাইট সমাবেশ
সোশ্যাল মিডিয়া ওমুক তমুক, ময়নাতদন্তে সব শেষ।
ধর্ষকেরা থাকছে মজায়, পাচ্ছে নাকো শাস্তি
ধর্ষণের সংখ্যা তাই আজ বিশ্বে নিচ্ছে স্বস্তি।।
ঠিকানা: উত্তর ঝাঁপড়দহ, ডোমজুড়-হাওড়া

ঈশ্বরের দূত

ঈশ্বরের দূত
অনীশ চট্টোপাধ্যায়

বাসারাল আসাদ বনাম রিবেলস
কুর্দিশ বনাম বাসারাল আসাদ
বাসারাল আসাদ বনাম আল কায়েদা
আই এস আই এস বনাম আসাদ
তুর্কি বনাম কুর্দিশ, তুর্কি বনাম রাশিয়া
আমেরিকা বনাম আই এস আই এস
বন্দুকধারী সৈন্য বনাম চামচ হাতে শিশু
রাশিয়া বনাম আই এস আই এস
চলছে লড়াই
স্থান - সিরিয়া
মারছে যারা
মরছে কারা?
সবকিছু দেখেশুনে বলে গেলো
তিন বছরের ঈশ্বরদূত, আমি
চললাম তবে জানাতে নালিশ 
ধ্বংসের আগে শেষ দৈববাণী।



শুভদীপ সেনের দুটি কবিতা


১। আমার মা,আমার না
    ******************


তখন তুমি ব্যাকরণ ঠোঁটে চালক।
অবাক রোদে জল দিয়েছো গাছে।
সময় মাঝে তুমিই কর্তৃকারক,
ফিদা হুসেনের জ্বর এসেছে নীচে।
নয় কবিতা একাদশী হয় রাতে
ভূগোলে তুমি খোঁজো পৃথিবী'র ছ্যাঁকা
জেরুজালেমের সন্ধ্যে নামে হাতে
তরুণী শাড়ি'র বিয়ের কথা পাকা...
গন্ধে আছো,সন্ধি করোনি ভোরে।
পোয়াতি এখন উপোসী সিঁধেল চোর–
কবির কলম ডিম পাড়ে সব নীড়-এ?
দোহাই তোমার অসভ্যতার বহর।
তোমার সূত্রে অংক বুঝিনা-ঠিক।
আমাকে একটা অনুমতি আজ দেবে?
সাগর বরং পরের পর্ব নিক...
কাল পেরেকে কোলকাতা আটকাবে!
^^^^^^^^^^^^^
২। অথঃ পুরুষ কথা
    ***************
যুক্তি যখন ঈদের চাঁদ
            করুণ চোখে ধাইবো পিছে
অকালবোধন তৃতীয় চোখের
            পলক জুড়ে রোদ কমেছে
শঙ্খ ঘোষের আপন মনে
            চলছে নতুন বই প্রকাশ
উল্টো গালের লাল কুমকুম
            চাইছে কেবল সর্বনাশ
শিখতে শিখতে পৌঁছে যাবো মধ্যরাতে তিনতালাক
লুকিয়ে দেওয়া কথা'রা সব,ব্যথা হয়েই বেঁচে থাক..
যখন তোমায় ভীষণ মানাই
         অপরাধ বোধ কাজ করে না
বে-আব্রু সব ডাকপিওনের
         কেয়ার-অফ হয় কচুরীপানা
তবুও পুরুষ দুশ্চরিত্র
              কথায় কথায় কানামাছি
গত সন্ধ্যের কোলবালিশ-এ
                      ফুলশয্যার তত্ত্বসূচী
সহজ শর্তে মৃত্যুকালীন সময় ঢাকে হাত-অজুহাত
তোমার লগ্নে দেবতা সাজলে নিহত স্মৃতি অন্তর্ঘাত
^^^^^^^^^^^^
কলম-এ : শুভদীপ পাপলু
কথা : ৯৮৭৪২৬৭০৪৩
ঠিকানা: ১৭/১০৪৮,আদর্শপল্লী,ধরমপুর
              ডাক+থানা-চুঁচুড়া , জেলা-হুগলী
                              সূচক-৭১২১০১


মে দিবসে

মে দিবসে
~উত্তম কুমার খাঁ

কৃৎ-কৌশলের অগ্রগমনে এল - সমাজে স্বচ্ছন্দের বাতাবরণ ;
বিজ্ঞানের জয়-ধ্বনি দিকে দিকে ফেরে
আজ উচ্ছল জনমন।
কলকারখানা আর শিল্পে সামিল
সহস্র কোটি প্রাণ;
কাঁধেতে যাদের কালসিটে দাগ
কণ্ঠে শিল্পের গান।
শ্রমিকের চির-ভাস্বর হাসিতে আসুক
শিল্পে উত্তরণের বান;
শাসক শোষিতের চির সংগ্রামে
হোক  শোষনের অবসান।


বালিপুর, হুগলী




সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি