ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 3 May 2018

তাজমহল

তাজমহল
~সামিম আলতাফ
........................................
প্রতিরোধের নিশ্ছিদ্র সীমান্ত শিবীরের
সার্থকতা এড়িয়ে, দূর্বার মনের গহনে
ছায়া ফেলে উদ্ভাসিত অতীত।
অবচেতন স্মৃতির দর্পণে ভেসে ওঠে
নবম বসন্তের পলাশ-রাঙা মুখ,
স্মৃতির সঞ্চয়ীতা ভরে ওঠে রোদন-ভরা বসন্তের
বিষণ্ণ সঙ্গীতে।
বিবেকের কারাগারে বন্দী-সত্তা নির্নীমেষ, নির্লজ্জ
দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে,মহুয়ার মদির স্বপ্ন, মেহেদী-
রাঙা অনুভুতি আর সোনার হরিণের আকাঙ্খার- সমাধির উপর গড়ে ওঠা জ্যোৎস্না-রাতের
তাজমহলের দিকে।
স্মৃতি তুমি বেদনা,রিক্ত হৃদয়ের অব্যক্ত ফরিয়াদ
হয়তো বা অর্থহীন ইথারীয় তরঙ্গে গঠিত-
শব্দগুচ্ছের মতো কিংবা হতেও পারে
আকষ্মিকতার স্বগতঃ রোমন্থন।

ঠিকানা- বালিপুর,হুগলী

লালবর্ণের শিলালিপি

লালবর্ণের শিলালিপি
~শুভদীপ সেন
    *******************

লাজুক যখন চোখে তখন সর্বনেশেই ধর্ম জ্বর
রাত সততায় ঝড় উঠেছে বিভক্ত ও নশ্বর।

দস্যিপনা'র দুধের সর,দেবদাসী'তে ভক্তি
পিতা যখন পিতৃতন্ত্রে,মুদ্রাদোষে বিপত্তি?

ভয়ে'তে আকাশ নিচেই ছিলো,চিঠি দিলেই আসত
তবুও আমার আমজনতা পুষ্টি'র ক্ষেপনাস্ত্র

ইন্দ্রজালের ভাগ্যবিধাতা জরায়ু'র শীতে বন্য
কাশ্মীর যদি ভারতীয় আজ;কাশ্মীরা নিশ্চিহ্ন।

পথ জাগছে,জেগে গিয়ে রোজ রোজগেরে সাজছি
মুঠো ভরেও কালো চামড়ায় কাটাকুটি শুধু খেলছি

চাইলে পাতাও বন্ধুয়ানি,চাইলে বাজাও জঙ্ঘা
জাতীয় মাছি,কবিতা লিখি।আদপে লবডঙ্কা!

~চুঁচূড়া, হুগলী

মানবতা

//মানবতা//
~নাজেশ আফরোজ

নিতে থাকো রোজ চামড়া পোড়া ঘ্রাণ,
যত্ন করে উপড়ে ফেলো শির,
লাল স্রোতেতে মনের সুখে স্নান;
জমতে থাকুক মুন্ডু কাটা ভিড়।

জিহাদ জ্বরে কাঁপছে গোটা দেশ
সেই সুযোগে কেউ প্রচার করে ভোট,
সন্ত্রাসী তো এদেরই ছদ্মবেশ;
এরা যতই ফোলাক সহিষ্ণুতার ঠোঁট।

কারো পেয়ালা খালি, কাঁদছে উঠোন;
ভেজা চোখে শুধুই ছেলের খোঁজ।
কারো পেয়ালা জুড়ে হিংস্র চুম্বন,
পোড়া মাংসে আয়েশি নৈশভোজ।

কিছু এঁটো সান্তনা ক্লান্ত মাথা খুঁজবে,
শক্ত হবে মুষ্টি বদ্ধ অঙ্গিকার,
গলা ফাটিয়ে মানবতার আওয়াজ তুলবে
পরের দিনেই পশম গায়ে যে যার।

এবার কুলুপ আঁটি আমরা আদুরে সন্তান,
বোকা বাক্সে চোখকে করি স্থির,
লাল স্রোতেতে মনের সুখে স্নান;
জমতে থাকুক মুন্ডু কাটা ভিড়।

বালিপুর, হুগলী

বুদ্বুদ

বুদ্বুদ
রাণা চ্যাটার্জী

কোলাহলের বুদ্বুদে বেঁচে থাকি
টিক টিক হৃদ স্পন্দন বুকে ,
ঘড়ির কাঁটা বরাবর এগিয়ে যায়
আমার ডাক আসার আগেই !
আজো অপেক্ষায় তোমার
ঝলমলে অতীত আর সুঘ্রাণকে মেখে ।

আর কি আগের মতো ক্যালেন্ডার দেখো ?
আঙ্গুল কড়ি করে গুনতে ভুলেও গেছো নিশ্চয় আমাদের পরিচয়ের বয়স ,
দেখা হবার তিথি ,নক্ষত্র ,সময় !

ওই জন্যই মন কে বোঝাই এতো জলদি ফুরিয়ে যেতে নেই ,ফুরিয়ে দিতে নেই
         আকাঙ্খা ,ভালোবাসাকে !
মধ্য গগনের সূর্যালোকের পর হটাত মুখ গোমড়া নিম্নচাপ কি ভালো লাগে বলো!

বর্ষা হৃদয়

বর্ষা হৃদয়
সুদীপ ঘোষাল

প্রাচীন মুখুজ্জে পুকুরের পাড়ে সবুজের কোলাকুলি
পাতা থেকে পড়া রূপো রঙ বৃষ্টি ফোঁটা
আজও কিশোর হয়ে আছো কি হৃদয়?
কৈশোর চোখে ভাসে বিল্বেশ্বর আশ্রম
মাঠের শেষে মাঠ, হাঁটু জল ভাঙ্গা লড়াই
বন্যায় মরণ খেলায় ডুবুডুবু পানসি বাওয়া
আজও কি জেগে আছো নবীন হৃদয়?

শিলাবৃষ্টি চড়বড় গোটানো  প্যান্টের মায়া
হাতে স্কুল ব্যাগ অন্য হাতে ছাতার আড়াল
বড় টানে বর্ষার ইলশে গুড়ি লুকিয়ে ভেজা
পাউশের মাছ ধরা সন্ধ্যায় মায়ের হাতে খাওয়া
দাদুর ভূতের গল্প অন্ধকার মেঘ অবিশ্রাম বৃষ্টি গজল

এখনও জেগে আছো ঘরে ঘরে ভারতের বর্ষা হৃদয়...

সুদীপ ঘোষাল
নন্দনপাড়া,খাজুরডিহি, পূর্ব বর্ধমান ৭১৩১৫০মো৮৩৯১৮৩৫৯০০

দ্বিতীয় দিন~ (অনুগল্প)

বাইশ ডিগ্রি ! সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখেই সাত্যকি বুঝলো - এ বছর জমিয়ে গরম পরতে চলেছে ৷ অভ্যাসবশত কিছুক্ষণ প্রাতঃভ্রমণ সেরে সে বাড়ি ফিরছিল ৷ সকালে পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজটা যেন মনটা শান্ত করে দেয় ৷ ফেরার সময় সে অন্য একটা রাস্তা নেয়, ওই যতটুকু দেরি করা যায় আরকি ! সকালে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেই বা কি কাজ ! রাস্তার মন্দিরের সামনে কী রকম যেন একটা ভিড় জমে আছে ৷ বেশ কিছু লোকের জমায়েত ৷ সাত্যকি এগিয়ে গেল সে দিকে ৷ একটা মেয়ে মাঝখানে বসে বসে কাঁঁদছে আর বেশ কিছু লোক চারপাশ থেকে মন্তব্য করেছে ৷

"পুলিশে খবর দিন মশাই, এ সব খুব ঘাঁঁটা কেস" ...

অন্য আরেকজন বলে উঠল - "এ তো শুধুই কাঁঁদছে, কিছু বলছেও না . কী হয়েছে বলো তো !"

মেয়েটা ধরা ধরা গলায় বলে উঠল -

"এক বন্ধুর জন্মদিনে নিমন্ত্রণ ছিল কাল, ফিরতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল ৷ এই রাস্তাটা দিয়ে বাড়ি ফিরতে একটু তাড়াতাড়ি হয়! তাই এ দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ৷ হঠাত্ বুঝতে পারি, কিছু মানুষ যেন পিছু করছে মনে হচ্ছে ৷ স্ট্রিট লাইটের ছায়ায় বুঝলাম তিন চার জন তো হবেই ৷ একটু জোরে হাঁটতে শুরু করলাম, ওদের পায়ের গতি ও বাড়ল আমার সাথে ৷ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে দূরত্ব ধীরে ধীরে কেমন যেন কমতে থাকছে ৷

ওদের মধ্যে একজন পেছন থেকে সিস কাটল, ওই মামনি একটু থামবে প্লিজ.....

কোনও উপায় না দেখে দৌড়তে শুরু করলাম ৷ ওরা আমার সাথে দৌড়তে শুরু করল ৷

কিছু ক্ষণের মধ্যেই দৌড়ে পেটে ব্যথা শুরু হল ৷ পা যেন চলছিল না ৷ মন্দিরের সামনে এসে বসলাম ৷ ওরা আমার কাছে এগিয়ে দাঁড়াল ৷ আমি আবার উঠতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তার মধ্যেই একজন পা দিয়ে আমার হাঁটুতে চেপে ধরল ৷

মনে প্রাণে ঈশ্বরকে ডাক ছিলাম "এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও" ৷

এর মধ্যেই বুঝতে পারলাম একজন পা দিয়ে আমার কাঁধে লাথি মেরে আমাকে ফেলে দিল রাস্তায় ৷ তারপর......"বলতে বলতে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ল...

ঠিক তখনই হঠাত্ করে কোনও একজনের কথা সাত্যকির কানে উড়ে এল - "ও সব বলে কোনও লাভ নেই মশাই ৷ রাতদুপুরে একটা মেয়ে এ ভাবে একা ঘুরে বেড়ালে এ রকম হতেই পারে......"

সাত্যকি মনে মনে বুঝতে পারল, পিতৃতন্ত্রের এই দম্ভ একজন প্রকৃত পুরুষ হিসেবে মেনে নিতে সে ব্যর্থ !

ইতিমধ্যে একটা পুলিশের গাড়ি থেকে দুজন কনস্টেবল নামল, কেউ খবর দিয়েছিল বোধ হয় !

সব কিছু শুনে মন্দিরের পুরোহিত বললো, "মন্দিরের গেটে বসে পড়লে আর দু'পা এগিয়ে মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না মা !!! ওখানের ঘণ্টাটা বাজালেই তো পেছন থেকে আমরা আসতাম ৷ একদম পেছনেই তো আমাদের বাড়ি !!! আর একটু বুদ্ধি খরচ করতে পারলে না মা!!!

অন্ধকার সুনসান ঘরে একটা পিন পড়লে যে রকম শোনা যায় মেয়েটার কথাটা যেন ঠিক তেমন ভাবেই চিরে বেরোলো -
"মনে প্রাণে ঈশ্বরকে ডেকে যাচ্ছিলাম বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু ইশ্বরের কাছ পর্যন্ত যেতে পারিনি...আজ তৃতীয় দিন... কাল দ্বিতীয় দিন ছিল ............. "

#নীল নওয়াজ

বর্ধমান,হুগলী।

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি