ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 14 June 2018

অপ্রকাশিত

অপ্রকাশিত
      
      ©অভিনব বন্দোপাধ্যায়

জানালায় মন ঠেকিয়ে রাখি,দৃষ্টি তখন কোথাও দুরে ।
তোমার গানে খেয়াল খুশি,গাইছি তবুও তোমার সুরে

বেশ তো আছি আলসেমিতে,দিনেরাতে একটানা
আমার মশালে আলো কম,অন্ধকারের আস্তানা ।

অভিমানে চোখ ভিজে গেছে,রুমাল খুঁজি গোপনে গিয়ে ।
তোমার চিঠি বেশ আবেগী,পড়ছি এখনও যত্ন নিয়ে ।

লেখার কথা অনেক ভাবি,মুখে কেবল কবিদের নাম ।
নিজের সাথে মানিয়ে নিয়েও ছদ্মবেশী দরদাম ।

সকালের সুর্যের অপেক্ষায় থাকি,উঠেছি সেদিন খুব ভোরে ।
তোমার গল্প বড্ড হিসেবি,ঘুরেছি মনখারাপের দফতরে ।

তোমার জন্যই ছন্দ খোঁজা,কবিতা যেন নদীর বাঁক ।
কারনটাই হারিয়ে যখন,লেখাগুলো অপ্রকাশিতই থাক ।

ঘুমের অঙ্গীকার

ঘুমের অঙ্গীকার

~সুমন দাস, গবেষক বাংলা বিভাগ, বিশ্বভারতী।


অক্লান্ত পরিশ্রমে শ্রান্ত শরীর,

দ্বিধাগ্রস্ত মন এলোমেলো সব

গোধুলি লগ্নে ফিরে যেতে চাই

নরম ঘাসে পা মাড়িয়ে প্রতীক্ষিত গৃহে,

অথবা শ্রান্তির অবশেষ ঘুমের গভীরে;

যে ঘুম দিতে হলে ক্লান্তি থাকতেই হবে।

নিশ্ছিদ্র অন্ধকার গৃহে সেই ঘুম দরকার,

নিশ্চিন্তের ঘুম

অথবা

রাত বারোটার পর পুকুরপাড়ে গাছতলায়;

তিন পুরুষ বন্ধু মিলে,

চন্দ্রালোকিত রাতের অন্ধকারে

অথবা দিনের দুপুরে;

শীত চলে গেলেও সেই ঘুম দরকার।

দ্বিধাহীন মনে রমণীর নির্ভেজাল শরীর ছাড়াই

ক্লান্ত অভ্যস্ত তিনটি কর্দমাক্ত পুরুষের ঘুম।

যেমনভাবে শীত ঘুম দেয় ব্যাঙ

অন্ধকার গুমোট গহ্বরে তেমন ঘুম দিতে হবে

অন্য এক ভবিষ্যতের অঙ্গীকারে।





একলা আকাশ

একলা আকাশ
~মৃণালকান্তি মুখ্যার্জী

আমার একলা আকাশ নেই কোনো তারা,
আমার একলা আকাশ তোমায় ছাড়া দিশাহারা

আমারএকলা আকাশ জমাটি শুধু মেঘ
আমার একলা আকাশ ভরা শুধু উদ্বেগ,

আজ কল্পনার আকাশে উড়ে আসে ঝড়
অন্য কারোর সাথে তুমি বেঁধো নতুন ঘর _

হাওয়ায় আমি ভেসে চলি স্বপ্নের ডানায় করে ভর
আমার স্বপ্নের ক্ষীণ আলো অশতিপর

মাটির উপর বেঁধো তুমি এমন একটি ঘর,
আমার হাড় বজ্ৰ হয়ে নেবে সেই ঘর এর ভর ......।

বাল্যকাল

বাল্যকাল
সুদীপ ঘোষাল

আমার বাল্যকাল জুড়ে পুজোবাড়ির শ্যাওলা
অন্ধকার গলিতে হঠাৎ সংযুক্তির বাজনা
খোলা মাঠের ধানের হিল্লোলে মাতোয়ারা শরীর
আমার বাল্যকাল জুড়ে দাদুর বিবর্ণ চিঠি

বাউলের সুরে বেজে চলে শিশিরের ছোঁয়া
ঘাসের পরশ,কদতলার ছায়া,গোকুল পুকুরের জল
আমার বাল্যকাল জুড়ে বাবলা ঘেরা পিসীর বাড়ি
শীতলার মাঠ,কবিগানের সুরে খড়ের বিছানা

কতশত সোনার স্মৃতি মধুর খেলায় মাতামাতি
পরাণের  পান্তুয়া,হাড়িবাড়ি গঙ্গার জেটি ঘাট

আমার বৃদ্ধবেলায় নবীনের খোঁজ,কাটোয়ার ক্ষেপীমা,নিলুদার কালিবাড়ি,খড়ের বাজার

তবু তার পাশ ছাড়ে না, সুবোধ স্মৃতির মোড়
স্টেশনের আড্ডা,ঝলমলে কার্তিক লড়াই

ন্যাশানাল সিনেমা, উত্তরার মোড় মাধাইতলা
আমার জীবন জুড়ে ভারতবর্ষের মাটি,কাটোয়ার শ্মশান,পুরুলের মা...

তাপসকিরণ রায়ের কিছু কবিতা

তাপসকিরণ রায়ের কবিতা

আন্দোলিত কথাগুলি
~

যে শব্দ দিয়েছি তোমায়, যে ছবি দেশান্তর,
তা দিয়ে কবিতা বানিয়ে দাও বুক,
ছায়া নিয়ে ছায়াতীত ভাবনা,
ঝংকার নিয়ে সমস্ত গানের স্বরলিপি,
বাতাস নিয়ে বৈশাখী ঝড়,
মাটির ফাটলে উদাসী খরার চিত্র আঁকা আছে দেখো !
ঘূর্ণ ফুঁৎকারে তোমার চরিত্র আঁকা—
নৈর্ব্যক্তিক ভাবনার আন্দোলিত কথাগুলি
তোমার কবিতা হয়ে যায়।

ছেঁড়া ডানা
~
ডানা ছেঁড়া পাখিটিকে আর দেখি নি,
অথচ তার পাখার হাওয়া আজও গায়ে এসে লাগে,
প্রখর মধ্যাহ্নে লেখা কবিতাগুলি বড় কঠোর হয়েছে !
নিংড়ে তুমি উঠে এলে বাইরে,
এমনি পলাশী বসন্তে কতবার মিলেছি,
এমনি বারুদী গন্ধে এখানে ওখানে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
সে সব কথকতা কালের শিথানে দাগ কাটা আছে।
সব কিছুই নাকি ভবিতব্য, তবু ভাগ্যপাখা বাঁচিয়ে ফিরি--
ফেরি করি জীবন গুজার !

জীবনে কখনও কিছু না কিছু লিখে দিয়েছি তোমার হাতে,
আজ অস্পষ্ট সে হলুদ খাম, ঝলসানো পাতায় তবু দেখ
সেই বিবর্ণ নাম, আজও তোমার অনুগ্রহে ছুঁয়ে আছে মন।

শব্দগুলি ভেঙে ভেঙে
~

শব্দগুলি ভেঙে  ভেঙে ভগ্ন রণিত কবিতা,
বিবস্ত্র মাঠের বিবর্ণতা, কখনও অরাজক তোমার কবিতা চিত্রণ।
তোমার শব্দ গ্রহণ নৈঃশব্দ থেকে শুরু হয়।
যে কণ নখরে ছিঁড়ে এলো, বৈদূর্য সৃষ্টির ভাব তোমার অন্তঃস্থল।
ভেঙে ভেঙে টুকরো টুকরো যন্ত্রণা,
আগুন স্ফুলিঙ্গ ছিঁড়ে আমাদের লাল মুখ,
বাতাস শ্বাসে ধরে নিই জীবন,
আর জীবনের মানে জন্মান্তর বেলা--সমগ্র বিশালতা যখন
ধরা থাকে বিন্দুর মাঝে ! 

মন্দিরা মিশ্রের দুটি কবিতা

১)
ভুলে ভরা  নাম _
~ মন্দিরা মিশ্র ।

ভুল , ভুল , ভুল , সবটাই পুরো ভুল ,
এবঙ্গে জন্মানোটাই সবচেয়ে বড় ভুল ।
কোথায় সেই সোনার বাংলা , কোথায় তার সোনার সন্তান ?
সোনার যুগের সোনার সন্তান , ভাবাটাই এখন বড় ভুল ।
ইতিহাস নিয়ে গর্ব করেই এতোদিন ছিনু মশগুল ,
ঘোর ভেঙে গেছে , চোখ খুলে দেখি , এখন সেসব হয়ে গেছে ভুল ।

হেথায় এখন রাঘব বোয়াল , বড় বড় হাঁ তাদের ,
হাঁ বন্ধ করতে যাওয়াও , সেযে চরম ভুল ।
দেশনেতার ধ্বজাধারী যত কাপুরুষের দল _
তাদের তালে তাল না দিলে , করবে আবার চরম ভুল ।
মহাজ্ঞানী , মহাজন , যে পথে করে গমন ,
সে পথেই চল সবে , নিজ যা কিছু , দিয়া বিসর্জন ।
নহিলে বুঝিবে হাতেহাতে , করেছিলে মহাভুল ,
সে ভুল শোধরাতে , করবে আরো কত ভুল ।

তাই সময় থাকতে গুছিয়ে নাও , নিজের আখের , নয়তো করবে আরেক ভুল ,
সে ভুলের নেইকো ক্ষমা , হয় ফাঁসী নয়তো চড়বে শূল ।
বালক তকমা-এঁটে করে যাও , যত রকমের ভুল ,
আছেতো মায়েরা , বুলিয়ে হাত , মাথায় বুলিয়ে বলবে , আহা , বাছারাইতো করে ভুল ।

এতো সুষ্ঠু-সুন্দর উপায় থাকিতে , তবু মিছে কেন কর ভুল ?
আহাম্মক , তাই এর পরেও তোমরা কর বারেবারে ভুল ।
ভুলতে হবে মহাপুরুষের বাণী , তার স্থলে দেশনেতার ভাষণ , অনেক দামী ,
একথা মাথায় রেখ , ভুলেও করনা সব ভণ্ডুল ।
হয়তোবা তোমারই একটি ভুলের অপরাধে ,
বংশ পরিচয় সবে চাপা পড়ে যাবে , জনতাও তোমা ভুলে যাবে ।
বুঝবে পরবর্তী প্রজন্ম , মহানেতার দেখানো পথ , অতিক্রম না-করার ভুল ,
ভুল থেকেই শিক্ষা নাও , করোনাকো আর অমন ভুল ।

বাংলা এখন কেবল ভুলে ভরা __
হেথায় রাঘব-বোয়াল চুরি করে , পুঁটি পড়ে ধরা ।

2)

হায় হায় কি দুঃসময় 
~ মন্দিরা মিশ্র ।
পথেঘাটে চলা এখন বেজায় যে দায় ,
বিপদ কখন ওৎ পেতে থাকে হেথায়-হোথায়_
জনতার হৃৎপিণ্ডে ধুকপুকুনি সকল সময় ,
হায় হায় কি দুঃসময় ।

তাজা ছেলে বাড়ীর বাইরে যখন যায় ,
মায়ের বুকটা ক্ষণেক্ষণে চমকায় আশঙ্কায়_
‘ছেলে আমার ফিরবেতো ঠিকসময় ?’
হায় হায় কি দুঃসময় য়।

হঠাৎ করে যেথাসেথা আমজনতার প্রাণটি যায় ,
কারণ কিতা কেউ জানেনা , বলি কেন হচ্ছে হায় _
মায়ের কাছে খবর আসে , ছেলে কোথাও নেই তোমার ,
হায় হায় কি দুঃসময় ।

আবার জাতক যদি কন্যাসন্তান হয় ,
বাবা-মায়ের ভয়-ভাবনা শতগুণ বেড়ে যায়_
কোন স্কুলে দেবে তাকে , কোনটা নিরাপদ ?
হায় হায় কি দুঃসময় ।

নবজাতিকা হোক কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধা ,
সন্ন্যাসীনী হলেও তার রেহাই মেলা ভার_
নারীদেহ লোভী পশুদের সবাই হয় শিকার ,
হায় হায় কি দুঃসময় ।

ঘরেঘরে কুপুত্র এত কোথা হতে আসে ?
মায়ের শ্লীলতা হরণ করেও , দিব্যি তারা হাসে ।
আবার বাপও এমন আছে যারা কন্যাকে ভোগ করে ,
হায় হায় কি দুঃসময় ।

লাগে টাকা দেবে গৌরী সেনের মত লোক ,
পায়েপায়ে ঘুরে বেড়ায় , বাড়াতে সাপোর্ট ।
পড়াশুনা ভাতেপোড়া , ছেলে টাকার টোপই গেলে ,
হায় হায় কি দুঃসময় ।

এমনি করেই ঘরেঘরে তৈরী চণ্ডাল ,
টাকার লোভে মুখে কুলুপ , মা-বাবার দল ।
ছেলে যতই করুক মন্দ , দাদা আছে , কিসের ভয় ?
হায় হায় কি দঃসময় ।

গালে হাত দিয়ে মোরা হা-পিত্যেশ করি ,
কবে পাব পরিত্রাণ , হায় কযে করি ?
ঘুচবে কবে এমনধারা অতি দুঃসময়_
ভরবে পরাণ , শতকোটি জান , আসবে সুসময় ।।

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি