ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 19 July 2018

মায়িশা তাসনিম ইসলাম'এর দুটি কবিতা

১)ডিএনএ-বলয়
~মায়িশা তাসনিম ইসলাম


আমাকে মারো, সমস্ত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো
চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাও ঘরের একপাশ থেকে আরেক পাশে ....
নাকমুখ দিয়ে শুধু গলগল করে ঝরুক ঘৃণায় মেশা রক্ত!
হাড্ডিতে, মজ্জায় আঘাতে আঘাতে বিলীন হোক এই সত্যটুকু, আমি তোমারই মেয়ে!
এ শরীর যেন শুধুই তোমার বীর্যপাতের ফল!!
আমাকে মারো, ব্যথার আদলে গড়ে উঠুক একটা অনাথ হৃদয়ের হিলিয়ামপূর্ণ গ্রহ!
সে গ্রহের আশেপাশে যদি ঘুরে ডিএনএ-বলয়,
জেনে রেখো, আমি রক্তের কাছে আত্মাকে সঁপে দেই না...
ঐ ঘৃণ্য বলয় ধ্বংসের জন্য তর্জনী থেকে ভেঙে যাওয়া নখটিই যথেষ্ট।
তোমার হাজারটা লাথি খেয়েও আমি মানবো না, পৃথিবীতে মানুষ নেই,
পুরুষ নেই!
কারণ না তুমি মানুষ, না তুমি পুরুষ
না তুমি পুরুষ, না তুমি পিতা।

২)দুয়ারদণ্ড
~মায়িশা তাসনিম ইসলাম

দরজার ওপাশে কারা কাঁদে?
চোখের গর্ত থেকে হাউমাউ করে বের হয় সাপ
ফণা তুলে লবণাক্ত বিষাদ!
কারা কাঁদে? কাদের বুকের পোড়া গন্ধে শ্মশানের অনুবাদ?
কাঁদের কান্নায় বন্ধ দরজা হয়ে ওঠে মৃত্যু-মন্দিরের জীবন্ত যাজক!
আমি যদি বলি বেশ্যা কাঁদে, তোমরা বলো ওটা কান্না নয়, শীৎকার
আমি যদি বলি ধর্ষিতা কাঁদে, তোমরা বলো সে আসলে গেয়ে যাচ্ছে শরীরের পুঁথি
আমি যদি বলি নারী কাঁদে, তোমরা বলবে জরায়ু হবে একসময় পুরুষের পরিত্যক্ত উঠান!
মূলত পৃথিবীর পুরুষদের কাছে সতীপর্দাই বেহেশতের প্রথম দরজা....


নাম: মায়িশা তাসনিম ইসলাম
ঠিকানা: ১৩০/ক, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, রোড নং ৫, ঢাকা, ১২০৭ (আশা টাওয়ারের পেছনে, পার্কের পশ্চিম পাশে। তিনতলা)


ক্ষুদ্র চোখে কত আশা (অণুগল্প)

। ক্ষুদে চোখে কত আশা।।
~অনিন্দিতা দে

সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ালেও আজকাল ছোটখাটো মেলা বসে যায়। সানগার্ড, গাড়ি মোছার ফুলঝাড়ু,বৃহন্নলা কি নেই! আমিও "ভদ্রমহিলা"দের মত কাঁচ তুলে বসে থাকি,কয়েকবার ঠকঠক করে হতাশ হয়ে চলে যায় মহারথীর দল!
সেদিনও হঠাৎ জানলার কাঁচে ঠকঠক,ওইপারে বছর দশেকের একটা শুকনো মুখ,হাতে রঙবেরঙের বেলুন!
-"একটা বেলুন নাও না দিদি,সারাদিন খাওয়া হয়নি!"
কি মনে হল, ড্রাইভারকে বললাম-"সাইড করুন দেখি,নামবো!"
-"কি নাম রে তোর?"
-"বাবলু"
-"স্কুলে যাস?"
-"ধুস,ওসব তো বড়োলোকরা যায়!"
-"স্কুলে গেলে তো মিড-ডে মিল খেতে পাবি!"
-"মালিক ছাড়বে না"
-"কে মালিক?"
ওদিক থেকে উত্তর নেই!
-"এদিকে আয়!"
এলো ভয়ে ভয়ে।
মিও আমোরেতে ওকে নিয়ে এসে বললাম-"বল কি খাবি?"
ওর চোখের সামনে তখন সাত রাজার ঐশ্বর্য!
-"আমি খাব?"
ওর চোখে মুখে বিস্ময়!
বার্গার আর কাজু বরফি খেলো,ওর চোখে আনন্দের ঝরণা উপচে পড়ছে তখন!
-"না দিদি,খালি হাতে গেলে হবে না,একটা বেলুন নিতেই হবে তোমাকে।"
সব দেখেশুনে সূয্যিমামাও খুশি হয়ে brightness টা একটু বাড়িয়ে দিল।
                        
অনিন্দিতা দে



প্রেম

।। প্রেম।।
~পারমিতা হালদার


আকাশে বাতাসে বিষন্নতা,
কোকিলেরা ডাকছে অবিশ্রান্ত!
উঠতি রোদের দাপটে,
প্রেম পথ হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত!
শীতের শুকনো ডালেতে,
আজ গজিয়েছে নতুন পাতা।
ঝরা পাতা মাটিতে লুটিয়ে,
পূর্ণতা পায়নি ওর প্রেম গাঁথা!
দুঃখ কষ্ট ব্যথা বেদনা বিনা,
আসলে প্রেমটাই অপরিপূর্ণ!
যেমন সংখ্যার সঙ্গ ছাড়া,
মূল্যহীন হয়ে পড়ে একা শূন্য!

- পারমিতা হালদার



আরিত্রিকা বসুর দুটি কবিতা

১)আজও..
~আরিত্রিকা বসু


জানিসতো,
তোকে আজো ভালোবেসে উঠতে পারলামনা আমি...
অথচ কী দ্বিধাহীন সাবলীলতায় আমায় ভালোবেসে ফেললি তুই!
তুই নীলচে স্নেহে জড়িয়ে রাখিস আমার আঙ্গুলগুলো
যাতে হোঁচট না খাই,
কিন্তু আমার কেবল ভালোলাগার বুকে জমে ওঠে উত্তেজনার ঘাম...
তুই নিষ্পাপ আঙ্গুলে চুলের গোছা গুছিয়ে দিস কপালে
আর আমি নিষ্পলকে দেখি দুটো প্রিয় ঠোঁট,
আমায় যখন খাইয়ে দিস আশ্লেষে বিব্রত করে তুলি তোকে,
হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ি প্রচন্ড ভালোলাগায়-
“ আমি খাওয়াতে পারিনা তাইনারে?”
আমায় শেখাবিরে কেমন করে একবুক ভালোবাসতে হয়?
যেখানে ঘামের গন্ধ লুকাতে হয়না,
নিসঙ্কোচে এগিয়ে দেওয়া যায় ছেঁড়া রুমাল,
বলা যায়-
“ আজ আমার পকেট ফাঁকা, তুই খাওয়া...”
আমি রোজ তোর প্রেমে টেনে টেনে চোখ আঁকি,
আর তুই মেট্রোর ভীরে ঘাম মোছাতে গিয়ে কাজল ঘেঁটে দিস।
দেখিস তোকে একদিন ঠিক ভালোবাসব আমি...
ঘেমে নেয়ে তোর বুকে আছড়ে পড়ে নিঃশর্ত হাসিতে ভেঙে পড়তে পড়তে বলব-
“ কীরে, আজ প্রেমিকার প্রথম চিঠি পেলি... ট্রীট দিচ্ছিস কবে?”
২)
অবিচ্ছেদ্য

  
ওরা তোকে ভুলে যেতে বলে...
তবু আমি প্রতি মধ্যযামের শবছেদী আঁধারে
            লিখি কাঠকয়লার চিঠি...
আমার বিষ্ণুপ্রিয়ার চোখে ওরা
             ঈশ্বরীস্নের কাজল পরায়,
ওরা খোঁজ রাখেনা ,
আমাদের প্রথম চোখে চোখ,
যেদিন চেরাপুঞ্জি প্রত্যাখ্যান করেছিল বৃষ্টি ধার দিতে...
প্রথম হাতে হাত,
যেদিন যক্ষিনী বলেছিল, ফিরে যাও মেঘদূত!!
কৃষ্ণাপঞ্চদশীর নামে শপথ রইল...
সেদিন ঠোঁটে রাখব ঠোঁট,
যেদিন আমার যৌতুকের আয়নায়
রাসপূর্ণিমার জোছনা জমবে মুঠো মুঠো...
শিউলি ঝরবে নকশিকাঁথার মাঠ জুড়ে..
    সেদিন মধ্যরাতে ইডেন নামুক
কল্লোলিনীর আনাচে কানাচে.....
 
-আরাত্রিকা বসু


বর্ষাতি

বর্ষাতি
~বর্ষা রায়


ভাল্লাগে হঠাৎ করে
না জানিয়ে মেঘ জমলে,
ভিজতে চাওয়ার ইচ্ছেগুলো
অজান্তেই যায় ফলে__
ছুটে গিয়েও ছুঁতে পারিনা
খেলার মাঠ জল থইথই,
ছেলেবেলায় বৃষ্টি ভেজার
স্মৃতিগুলোই আজ সই।
কলার ভেলায় ভেসে চলা সেই
ইচ্ছে গুলো আজ দেহাতি,
কচুপাতার গল্পগুলো
বোঝে কি দামী বর্ষাতি।


সৃষ্টি

সৃষ্টি
ইন্দ্রাণী ঘটক


সকাল থেকে সর্বগ্রাসী সূর্যের আর্তনাদ
গ্রাস করছে টাটকা গোলাপ
এবার হরপ্পা নাকি মহেঞ্জোদাড়ো?
কন্নার বিষ ঝরে পড়ছে অসহায় মা এর বুক থেকে
কবরের ভেতরে ডানাকাটা নদী
সেই কবে মুখ লুকিয়েছিল
না দেখতে পেরে বস্ত্রহরণের পালা
এই দুর্যোগপূর্ণ রাতে কোনো এক সাধকের কলম বলে চলেছে
ধ্বংস হোক,ধ্বংস হোক,
সৃষ্টি হোক -হে ভগবান


কালো

কালো
~দেবারতি সাহা


চলেছি এগিয়ে  মৃত্যুর পথ বেয়ে জীবন 
যা ধূমকেতুর আলোয় সৃজন
কালো কিছু পথ; খোলা আকাশ
নীল এর পর কালো।
    জীবন  এ এগানোর পথ গুলো।
কাল পুরুষ  আমি, নয় লুব্ধক,
হাতে তরোবারি যুদ্ধ এর আবাহক।
জীবন এর পথে শুধু যুদ্ধ -
রক্তের রং লাল, আরও পরে কালো।
জমাট  বাধা স্মৃতি পাথরে, বেদনার কিছু আলো -
ঠিকরে চলে গেল; হিরার মত উজ্জল -
কিছু আনন্দ, কিছু চিত্র আর গভীর  বেদনায় আছে জলজল,
ভুলব কাকে কিছু গভীর  বেদনা না স্মৃতিকে,
সব রং  মিশেছে  আজ কালো  থেকে আর কালোতে।


পার্বতীর ব্যাকুলতা

পার্বতীর ব্যাকুলতা
~সৃজা রায়


হে প্রভু, নির্জন গহন অরন্যে আমি একা,
যোগীনি পার্বতীরে তুমি দাও একবার দেখা,
বাজাও একবার তোমার ওই প্রলয় বাদ্য;
মাল্য গেঁথেছি তোমার জন্য আমার যা সাধ্য।
জটাধারী দেবাদিদেব তুমি শুভশক্তির প্রতি,
জ্ঞানরূপে, তেজরূপে নিঃসৃত সেই জ্যোতি।
অম্লান বদনে গর্জনের আভাসের ভেলা,
এ কী মায়া তোমার,এ কী লীলাখেলা!
তন্ত্র, মন্ত্র, সাধনায় তুমি চন্দ্র তোমার সাথে,
ওই জটা থেকে নির্গত গঙ্গা-ভাগীরথী।
প্রনাম লহ মোর ওহে রুদ্র সন্ন্যাসী,
ভোলানাথ,মহেশ্বর ওগো সর্প গরল গ্রাসী।
একাধারে তুমিই মোর প্রানের প্রিয় স্বামী,
ক্ষত-বিক্ষত দেহ নিয়ে মোর,নৃত্য প্রলয়াগ্নি।
হও না তুমি শ্মশানবাসী, মাখ না ভস্ম ছাঁই,
পূনর্জন্মেও তোমায়  যেন পতিরূপেই পাই।

----------সৃজা রায়
গ্রাম+পোঃ-হাড়মাসড়া
জেলা -বাঁকুড়া
পিন নং-৭২২১৫২


সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি