ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 10 May 2018

প্রাপ্তি (অনুগল্প)


>প্রাপ্তি
~প্রিয়াঙ্কা সামন্ত
ঘরের দরজা বন্ধ করে একমনে মা ভবতারিণী কে ডেকে যাচ্ছেন অশ্বিনী বাবু, ‘মা গো মা, এইবারটা আর মুখ ঘুরিয়ে থেকো না। মুখ তুলে চাও মা'।
সকাল থেকে কেউ ডেকে ডেকে দরজা খোলাতে পারেনি। না জল, না চা কিচ্ছুটি মুখে দেননি। সেই ভোরবেলায় ছোটবৌমার প্রসববেদনা ওঠা ইস্তক তিনি ঘরে দরজা দিয়েছেন। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে করে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বেরোননি। শুধু বন্ধ দরজার ওপার থেকে বলেছিলেন, “মা ভবতারিণী মঙ্গল করুক”।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল। অশ্বিনী বাবুর স্ত্রী দরজায় টোকা দিলেন, “কিগো দরজা খোল, ছোট খোকার মেয়ে হয়েছে”।
অশ্বিনী বাবু জপ বন্ধ করে দরজা খোলেন। চোখের পাশে কুঁচকে যাওয়া শিথিল চামড়ার খাঁজে খাঁজে জল জমে।
“নাতনি হয়েছে গো নাতনি, এখনো দরজা দিয়ে বসে থাকবে?”
অশ্বিনী বাবু ঘরে ঢুকে দ্রুত ধুতি আর ফতুয়াটা গলিয়ে নেন। সিন্দুক খুলে লাল শালু কাপড়ে মোড়া ভবতারিণীর লকেট দেওয়া সোনার চেনটা পকেটে পুরে রওনা দেন নার্সিংহোমের উদ্দেশ্যে। আজ এই হারের উত্তরাধিকারী এসে গেছে।
নার্সিংহোমে ঢুকে প্রথমবার নাতনিকে দেখে অশ্বিনী বাবু বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলেন। অবিকল এক চোখ, এক নাক, এক রকম ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসি। সোনার চেনটা নাতনির গলায় পরিয়ে দিতেই সে ছোট ছোট হাত বাড়িয়ে দিল অশ্বিনী বাবুর দিকে। অশ্বিনী বাবু তার দিকে আঙুল বাড়িয়ে দিতেই সে ছোট মুঠোয় কব্জা করে ফেলল অশ্বিনী বাবুর আঙুল। অশ্বিনী বাবুর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। মাওতো ঠিক এই ভাবেই তার আঙুল ধরতো। তার সেই আঠারো বছর বয়েসে মা মরে যাওয়া ইস্তক তিনি ভবতারিণীকে ডেকে এসেছেন মা কে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। মায়ের গলার হারটা সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন নিজের কাছে। আজ এতদিনে ভবতারিণী তার কথা শুনলেন। এবার তিনি আর মা কে কোত্থাও যেতে দেবেন না।

বিষবাষ্পের কথা

বিষবাষ্পের কথা

বন্ধ্যা জমি,সেচের উপায় নেই জেনেও ঘিরে                                                                                               ফেলে আগাছার বিষবাষ্প। এটি আমরা                                                                                                             চাইনি তা নয়,বাতাস আমাদের কানে                                                                                                                 পৌঁছোয়নি। কথা-বলা-হাঁটা-চলা                                                                                                                         রান্নাঘরের মোরাম রাস্তা হয়ে ফেলে।
বিরল রাতে বসে চিঠির যে বয়ান লিখি আমি                                                                                                     তা জানালা খুলে রান্নাঘরের রাস্তা। দেখতে                                                                                                         চাইলে আজ আর দেখতে চাই না। চারিপাশে                                                                                                 ফুলের চাষ,বর্ষায় ফুল ফুটেছে কয়েকটি।                                                                                                 তোলার অধিকার ছিল আমার। রসুল রাস্তায়                                                                                                    কুচি কুচি। গদ্য কখনো চিঠি কখনো ছবি।
ছবি,ছবি,ছবি এবার চুপ করো তো                                                                                                                    হায়না আসবে ছুটে – যখন প্রভাতে বাঁশরি                                                                                                      নিয়ে,হেতু সেই পথটি খুঁজতে চায়। নেই                                                                                                            ভালোবাসার এক কাপ লাল চুমুক।                                                                                                                  তবু সকাল যখন হলো – রান্নাঘরে                                                                                                                  বাসনগুলো নড়তে দেখি।

~কবি পরিচয় —
রাহুল ঘোষ। জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৯৪। বোলপুর কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (২০১৫)                                                                                                                                   এবং স্নাতকোত্তর (২০১৭) বিশ্বভারতী,শান্তিনিকেতন থেকে।
ঠিকানা-
পোস্টঅফিস ও শহর- বোলপুর                                                                                                                                                                                                                                পাড়া-কালিকাপুর                                                                                                                                                                                                                                                   জেলা- বীরভূম       

শুভাশিস দাশের দুটি কবিতা

কবিতা সাম্প্রতিক
--------------------------শুভাশিস দাশ
এখন মধ্যবিত্ত রাত হামাগুড়ি দেয়
চারপাশে জমাট অন্ধকার লাশ
শেষ কবে কোজাগরী দেখেছিলাম মনে নেই
সূর্য দেখাবে বলে যে প্রেম কথা দিয়েছিল
সে এখন নষ্ট চাদরে ঢেকে দেয় মুখ I
আমাদের যাবতীয় সুখ উবে গেছে
উবে গেছে দিনযাপনের আটপৌরে দস্তাবেজ
এই বাণপ্রস্থ আর কতদিন পরান কাকা ?
-------------------------------------------------
তোমার কাছেই নতজানু হই
-----------------------------------------
তোমার কাছেই নতজানু হই
তোমার কাছেই ফিরে আসি শিলাইদহে
স্বপ্ন জুড়ে জোড়াসাঁকো ছবি আঁকে
আমাদের অষ্ট প্রহর তোমাকে নিয়েই হে রবীন্দ্রনাথ !
আমাদের শিশু শিক্ষা তোমাকে ঘিরেই
কিশোর বেলার বীর পুরুষ তুমি
যৌবনের দূত হয়ে পথ দেখাও তুমি
তোমার কাছে ,একমাত্র তোমার কাছেই নতজানু হই হে দার্শনিক রবীন্দ্র নাথ !
--------------------------------------------------------
শুভাশিস দাশ
দিনহাটা ,কোচবিহার


দোতারা

দোতারা
                                 মহাজিস মণ্ডল
আমার অন্যমনস্কতার ছায়া দাগগুলো পেরিয়ে দেখি
অবনত জলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ
যায় কোনো শক্র নেই যায় কোনো শক্র হয় না কোনোদিন
আয়নার সামনে দাঁড়ালে আয়না ও সামনে আসে
আয়নার নিজস্ব কিছু ভাষা ও তোমার ভাষাতে
নিজস্ব অবয়ব রেখায় রঙ ছড়িয়ে হাসে
এই তো তোমার হাত ছুঁয়েছি আমি
নিয়ত বাস্তবের ঘুম ভাঙিয়ে পরিচিত আকাশে
প্রজাপতির মতন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে ঘড়ি
আমার দোতারা আর বাজে না প্রতিদিন
তার বড় অসুখ করেছে মানুষের মতো বড় অসুখ....
    
                            -০-
মহাজিস মণ্ডল
২৭,শহীদ পূর্ণেন্দু নগর
ঠাকুরপুকুর
কলকাতা-৭০০০৬৩

আনমনা ছেলেটি


আনমনা ছেলেটি
সোমনাথ চক্রবর্তী
ডিহং নদীর তীরে যে ছেলেটি একরাশ শব্দ পুঁতেছিল,
সব উচ্ছাস ফ্যান ভাতের গন্ধে হারিয়েছিল।
দেখা যায় বইমেলার এককোণে দাঁড়িয়ে পত্রিকা হাতে,
পায়ের ধুলোমাখা ঘাসের শৈশব পাকানো কান্না ঢালে মর্মরধ্বনির খাতে।
বেগনী রঙের জলছবি চলে যায় ফতুয়ার সুতো ছিঁড়ে,
ক্লান্ত পত্রিকা ওড়ে বায়ুশূন্য পরিযায়ীর তিরে।
মা - ছেলের দুটো পেট চলে যায় কবিতার খাতিরে,
তিনটে পেট চালানো যায়নি একটু আনমনে আঁচড়ে।
অনুভূতির রঙচটা দেয়াললিখন এখানে বড়োই বেমানান,
টেবিলের হা-হুতাশ গোণে শব্দক্ষিদের সাথে ভুল বানান।
ভেজা রোদ্দুর আর রাতজাগা জানালায় বাঁচে আগাছার দালান,
ধোঁয়াটে ঘর আর মরচের হৃদয়ে শুধু চাপা 'উলগুলান'।

বুড়ো বট


....বুড়ো বট....
ডালপালা উড়িয়ে,মাথাটুকু উঁচিয়ে,
কচিপাতা নাড়িয়ে,
বেঁচে আছি।
দুই ধার উঁচু যার,মাঝখান নীচু তার
মূলগুলো ছড়িয়ে,
ধরে আছি।
পাখিগুলো মাঝেমাঝে, খেলেযায় বটগাছে,
পাখি বলে বুড়ো বট ঘুরে আসি;
সবাই ওরা থাকে আমার পাশাপাশি।
সাড়ে তিনটে বাজলো বোধহয়,
ছেলের দল ছোটে রাস্তায়,
ঘুম ভাঙলো ছুটির কোলাহলে।
পড়তি বেলার রোদ্দুর এসে-
খুনসুটি আর গল্প বলে,
আমরা দুজন হেসেই কুটোকুটি।
চৌরাস্তার পিচের মাথায়,
ওই যে ওরা কোথায় যায়--
মুখগোমড়া ছেলেগুলোর দল;
বকুলতলায় করে উপদ্রব
রঙীন রঙীন ছেলে-মেয়ে সব
হাজার হাজার প্রেমের কথা বলে।
লজ্জায় আমি রাঙা হয়ে তাই
রোদ্দুরেরই পানে তাকাই,
বুড়োবটের ভীমরতিটা
রোদ্দুর ভালোই জানে।
রাশমেলার ওই আটচালাতে,
রামায়নের জটলা পাকে,
বুড়ো-বুড়ি শোনে আসন পেতে,
ভাতঘুমেরই ঢুলুঢুলু চোখে,
কখনো আবার আঁতকে ওঠে
রাবন আসার ভয়ে।
পাড়ার মোড়ে দোকান খোলে,
জগাই মাধাই দুজন মিলে,
উনুন ধরিয়ে চা বানাতে বসে।
পড়তি রোদ্দুর যাবে চলে,
তাইতো আমার গলা মিলিয়ে,
কান্নাকাটি করে।
সন্ধ্যে যখন আসছে সবে,
পাখির দল যাচ্ছে ছুটে,
গরুর দল ধুলো উড়িয়ে চলে।
সান্ধ্যকালীন নিদ্র যখন,
গ্রাস করলো পৃথিবীর ধন,
প্রদীপ জ্বলে উঠলো সবার ঘরে।
শাঁখ বাজলো ধীরে ধীরে,
কাঁসর,আরতি সাজলো মন্দিরে,
ছেলেমেয়েদের আলোচ্য সাতকাহন।
আমার দেহকে ঘিরে ফেলে,
আঁধার যখন হেলে দুলে
জোনাকি এসে ছুঁয়ে যায় মন।
পুরোনো হয়েছি বহুকালে,
গুড়ি নেমেছে ডালে ডালে
মন্দ-ভালোর নির্বাক সব খেলা!
ঋন হলো না শোধ কভু,
হাসতে হাসতে ভাবি শুধু,
এ কোন অনুতাপের মেলা!
ধরনীর এই বহির্ধারে
শান্তদিঘির কূলপাড়ে
দাঁড়িয়ে আছি একা।
কেউ শোনে না আমার কথা,
কেউ বোঝেনা আমার ব্যাথা,
দিন-রাত্রি আবর্তন করে ফেরে।
কত দেনা আছে লেখা
কত পাওনা যায় না দেখা
আঁকিবুঁকি আমার বাকল ছালে।
গুঁড়ি হয়েছে স্ফীত এখন
মনে জাগে বৃক্ষছেদন
তাইতো আমি অস্বস্তিতে ভুগি;
নয়নজলে সপ্তপ্রদীপ,
স্বর্নালী হয়ে জ্বলে দীপ দীপ।
হয়তো কভু নিভে যাবে,
লাবন্যেরই ভাটা আসবে
শূন্য হবে মহাজাগতিক জালে
মোহো-মায়ার চিরন্তনের ভালে।
দাঁড়িয়ে তবু নিশ্চুপ ভয়ে,
ঐতিহাসিক, প্রামাণিক দূত হয়ে
জানিনা কবে ভেসে যাব
সায়াহ্নের শেষকালে।
--------------সৃজা রায়

বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি

বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি
                
                 --অভিনব বন্দোপাধ্যায়

কবি নই তাই কবিতা আসে না বৃষ্টি দেখে,
কিন্তু খুব মনে পড়ে তোমায় ।
মনের মাটি তো তুমি ভিজিয়ে দিয়েছিলে
স্মৃতি গুলো ই আজ মনে রাখার একমাত্র সহায় ।।
মনে পড়ে এই বৈশাখের বেশ কয়েক বছর আগে,
যখন আমরা কাছাকাছি এসেছিলাম মনে মনে..
বেপরোয়া সেদিনের কথা গুলোই তো ,
শান্তনা দেয় দিনে দিনে ।।
বৃষ্টি থেমেছে ,মাটিতে একটা গভীর দাগ,
অনেকটা আমার মনের মতো  ।
যে দাগটা তুমি কেটেছিলে,
ওই দাগটাই তো একদিন মনকে করে তুলেছিল ক্ষত বিক্ষত ।।
কোথায় গেছো জানি না ,
হয়তো আর আগের মতো ভাবনায় আর আসি না ।
তুমি এখনও ঘুরে বেড়াও আমার মনে,
তবু আমিও আর মিথ্যে আবেগে ভাসিনা ।।
ক্যানভাসের ফ্রেমে এখনও মিথ্যে শান্তনা আঁকি,
তুমি নাহয় বৃষ্টি ভেজা আমোদ মেখো ।
খুশিতে থাকার মুখোশ নিয়ে মুখ ঢাকি আমি ,
তুমি কেবল  আনন্দে থেকো ।।

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি