ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 10 May 2018

বুড়ো বট


....বুড়ো বট....
ডালপালা উড়িয়ে,মাথাটুকু উঁচিয়ে,
কচিপাতা নাড়িয়ে,
বেঁচে আছি।
দুই ধার উঁচু যার,মাঝখান নীচু তার
মূলগুলো ছড়িয়ে,
ধরে আছি।
পাখিগুলো মাঝেমাঝে, খেলেযায় বটগাছে,
পাখি বলে বুড়ো বট ঘুরে আসি;
সবাই ওরা থাকে আমার পাশাপাশি।
সাড়ে তিনটে বাজলো বোধহয়,
ছেলের দল ছোটে রাস্তায়,
ঘুম ভাঙলো ছুটির কোলাহলে।
পড়তি বেলার রোদ্দুর এসে-
খুনসুটি আর গল্প বলে,
আমরা দুজন হেসেই কুটোকুটি।
চৌরাস্তার পিচের মাথায়,
ওই যে ওরা কোথায় যায়--
মুখগোমড়া ছেলেগুলোর দল;
বকুলতলায় করে উপদ্রব
রঙীন রঙীন ছেলে-মেয়ে সব
হাজার হাজার প্রেমের কথা বলে।
লজ্জায় আমি রাঙা হয়ে তাই
রোদ্দুরেরই পানে তাকাই,
বুড়োবটের ভীমরতিটা
রোদ্দুর ভালোই জানে।
রাশমেলার ওই আটচালাতে,
রামায়নের জটলা পাকে,
বুড়ো-বুড়ি শোনে আসন পেতে,
ভাতঘুমেরই ঢুলুঢুলু চোখে,
কখনো আবার আঁতকে ওঠে
রাবন আসার ভয়ে।
পাড়ার মোড়ে দোকান খোলে,
জগাই মাধাই দুজন মিলে,
উনুন ধরিয়ে চা বানাতে বসে।
পড়তি রোদ্দুর যাবে চলে,
তাইতো আমার গলা মিলিয়ে,
কান্নাকাটি করে।
সন্ধ্যে যখন আসছে সবে,
পাখির দল যাচ্ছে ছুটে,
গরুর দল ধুলো উড়িয়ে চলে।
সান্ধ্যকালীন নিদ্র যখন,
গ্রাস করলো পৃথিবীর ধন,
প্রদীপ জ্বলে উঠলো সবার ঘরে।
শাঁখ বাজলো ধীরে ধীরে,
কাঁসর,আরতি সাজলো মন্দিরে,
ছেলেমেয়েদের আলোচ্য সাতকাহন।
আমার দেহকে ঘিরে ফেলে,
আঁধার যখন হেলে দুলে
জোনাকি এসে ছুঁয়ে যায় মন।
পুরোনো হয়েছি বহুকালে,
গুড়ি নেমেছে ডালে ডালে
মন্দ-ভালোর নির্বাক সব খেলা!
ঋন হলো না শোধ কভু,
হাসতে হাসতে ভাবি শুধু,
এ কোন অনুতাপের মেলা!
ধরনীর এই বহির্ধারে
শান্তদিঘির কূলপাড়ে
দাঁড়িয়ে আছি একা।
কেউ শোনে না আমার কথা,
কেউ বোঝেনা আমার ব্যাথা,
দিন-রাত্রি আবর্তন করে ফেরে।
কত দেনা আছে লেখা
কত পাওনা যায় না দেখা
আঁকিবুঁকি আমার বাকল ছালে।
গুঁড়ি হয়েছে স্ফীত এখন
মনে জাগে বৃক্ষছেদন
তাইতো আমি অস্বস্তিতে ভুগি;
নয়নজলে সপ্তপ্রদীপ,
স্বর্নালী হয়ে জ্বলে দীপ দীপ।
হয়তো কভু নিভে যাবে,
লাবন্যেরই ভাটা আসবে
শূন্য হবে মহাজাগতিক জালে
মোহো-মায়ার চিরন্তনের ভালে।
দাঁড়িয়ে তবু নিশ্চুপ ভয়ে,
ঐতিহাসিক, প্রামাণিক দূত হয়ে
জানিনা কবে ভেসে যাব
সায়াহ্নের শেষকালে।
--------------সৃজা রায়

1 comment:

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি