ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 3 May 2018

দ্বিতীয় দিন~ (অনুগল্প)

বাইশ ডিগ্রি ! সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখেই সাত্যকি বুঝলো - এ বছর জমিয়ে গরম পরতে চলেছে ৷ অভ্যাসবশত কিছুক্ষণ প্রাতঃভ্রমণ সেরে সে বাড়ি ফিরছিল ৷ সকালে পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজটা যেন মনটা শান্ত করে দেয় ৷ ফেরার সময় সে অন্য একটা রাস্তা নেয়, ওই যতটুকু দেরি করা যায় আরকি ! সকালে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেই বা কি কাজ ! রাস্তার মন্দিরের সামনে কী রকম যেন একটা ভিড় জমে আছে ৷ বেশ কিছু লোকের জমায়েত ৷ সাত্যকি এগিয়ে গেল সে দিকে ৷ একটা মেয়ে মাঝখানে বসে বসে কাঁঁদছে আর বেশ কিছু লোক চারপাশ থেকে মন্তব্য করেছে ৷

"পুলিশে খবর দিন মশাই, এ সব খুব ঘাঁঁটা কেস" ...

অন্য আরেকজন বলে উঠল - "এ তো শুধুই কাঁঁদছে, কিছু বলছেও না . কী হয়েছে বলো তো !"

মেয়েটা ধরা ধরা গলায় বলে উঠল -

"এক বন্ধুর জন্মদিনে নিমন্ত্রণ ছিল কাল, ফিরতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল ৷ এই রাস্তাটা দিয়ে বাড়ি ফিরতে একটু তাড়াতাড়ি হয়! তাই এ দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ৷ হঠাত্ বুঝতে পারি, কিছু মানুষ যেন পিছু করছে মনে হচ্ছে ৷ স্ট্রিট লাইটের ছায়ায় বুঝলাম তিন চার জন তো হবেই ৷ একটু জোরে হাঁটতে শুরু করলাম, ওদের পায়ের গতি ও বাড়ল আমার সাথে ৷ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে দূরত্ব ধীরে ধীরে কেমন যেন কমতে থাকছে ৷

ওদের মধ্যে একজন পেছন থেকে সিস কাটল, ওই মামনি একটু থামবে প্লিজ.....

কোনও উপায় না দেখে দৌড়তে শুরু করলাম ৷ ওরা আমার সাথে দৌড়তে শুরু করল ৷

কিছু ক্ষণের মধ্যেই দৌড়ে পেটে ব্যথা শুরু হল ৷ পা যেন চলছিল না ৷ মন্দিরের সামনে এসে বসলাম ৷ ওরা আমার কাছে এগিয়ে দাঁড়াল ৷ আমি আবার উঠতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তার মধ্যেই একজন পা দিয়ে আমার হাঁটুতে চেপে ধরল ৷

মনে প্রাণে ঈশ্বরকে ডাক ছিলাম "এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও" ৷

এর মধ্যেই বুঝতে পারলাম একজন পা দিয়ে আমার কাঁধে লাথি মেরে আমাকে ফেলে দিল রাস্তায় ৷ তারপর......"বলতে বলতে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ল...

ঠিক তখনই হঠাত্ করে কোনও একজনের কথা সাত্যকির কানে উড়ে এল - "ও সব বলে কোনও লাভ নেই মশাই ৷ রাতদুপুরে একটা মেয়ে এ ভাবে একা ঘুরে বেড়ালে এ রকম হতেই পারে......"

সাত্যকি মনে মনে বুঝতে পারল, পিতৃতন্ত্রের এই দম্ভ একজন প্রকৃত পুরুষ হিসেবে মেনে নিতে সে ব্যর্থ !

ইতিমধ্যে একটা পুলিশের গাড়ি থেকে দুজন কনস্টেবল নামল, কেউ খবর দিয়েছিল বোধ হয় !

সব কিছু শুনে মন্দিরের পুরোহিত বললো, "মন্দিরের গেটে বসে পড়লে আর দু'পা এগিয়ে মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না মা !!! ওখানের ঘণ্টাটা বাজালেই তো পেছন থেকে আমরা আসতাম ৷ একদম পেছনেই তো আমাদের বাড়ি !!! আর একটু বুদ্ধি খরচ করতে পারলে না মা!!!

অন্ধকার সুনসান ঘরে একটা পিন পড়লে যে রকম শোনা যায় মেয়েটার কথাটা যেন ঠিক তেমন ভাবেই চিরে বেরোলো -
"মনে প্রাণে ঈশ্বরকে ডেকে যাচ্ছিলাম বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু ইশ্বরের কাছ পর্যন্ত যেতে পারিনি...আজ তৃতীয় দিন... কাল দ্বিতীয় দিন ছিল ............. "

#নীল নওয়াজ

বর্ধমান,হুগলী।

No comments:

Post a Comment

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি