ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Thursday 27 September 2018

পতাকা

পতাকা
মোঃ মাসুদ রানা

আমি সেদিন রক্তাক্ত হয়েছিলাম ।
খুব আঘাতে বুকের পাঁজর গুলো হাঁকডাক করছিল ।
গোটা শরীর নিস্তেজ নিস্তব্ধ হয়ে অচল হয়েছিল ।
মাথা গুড়ে বারবার দুনিয়া ওলটপালট লাগছিল ।
হঠাৎ থমকে গিয়ে উৎকন্ঠা হয়ে দেহ কাঁপছিল ।
এলোমেলো ভরাডুবির চিন্তাভাবনায় নিজ প্রাণ অকেজো ছিল ।
ডুবন্ত রক্তকণা বারবার দেহ থেকে অপসারিত হতে চাইছিল ।
যেদিন ,আমাকে না চিনে জানতে চেয়েছিল পরিচয় ।
জানতে চেয়েছিল আমার জন্মভূমি ।
জানতে চেয়েছিল আমার মাতৃভূমি ।
জানতে চেয়েছিল পিতৃভূমী ।

আমি খুব মর্মান্তিক মর্মাহতে দুঃখে কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ ।
শোকের ছায়ায় চোখের পর্দাগুলোকে ধরে রাখতে পারিনি বেশিক্ষণ ।
ক্ষোভে দগ্ধ হয়ে শুকনো পাতায় পুড়েছি অনকটা ক্ষন ।
তিক্ত হয়ে গুলির মতো জর্জরিত হয়েছি সারা সন্ধ্যে ক্ষন ।

যেদিন আমাকে অযথা প্রশ্নে পরীক্ষা করে জানতে চেয়েছিল আমি এসেছি কোত্থেকে ।
জানতে চেয়েছিল নীরবতায় নিমজ্জিত নিস্ফলক আবেগকে ।
জানতে চেয়ছিল আমার উৎসের উৎপত্তির সন্ধিক্ষণকে ।

আমি খুব বিচলিত বিস্কোরণের রোগে রোগান্নিতে আক্রান্ত হয়ে পরেছিলাম ।
দূগন্ধে পঁচা মৃত শালিকের মতো দাঁড়িয়েছিলাম।
কর্কট কন্ঠে কথা শুনতে ভেজা বিড়াল সেঁজেছিলাম।
চক্ষু লজ্জায় রাগ ভেসে ওঠার উপক্রম অবস্থা হজম করছিলাম ।
ক্রদে ক্লান্তে অজান্তে অসমাপ্তে নিজেকে সান্ত্বনায় বশ করছিলাম ।

যখন বলেছিল ধর্ষিত ধর্ষিতার কোনও ঠাই নাই এ কুঁড়েঘরে।
ঠাই নাই ঠাই নাই এই
মাঠ ফসল আর গবাদি পশুর চরে ।
ঠাই নাই এই নদী মাতৃক দেশের কূল কিনারে ।

আমি তখনও মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে কন্ঠস্বর নামিয়ে ধৈর্য ধারনে ব্যস্ত ।
শর্তহীন বক্তব্যের আগাছার আবর্জনার স্তূপ হয়ে নিজেকে রেখেছিলাম ন্যস্ত ।
আঙুল নাড়ানোর ইশারার ইতিবস্তর চোখ রাঙানো ভাষ্যগুলোয় ছিলাম পরাস্ত ।
হুমকি ধামকির উন্নয়নের উপর্যুপরিতে ঘাড় নাড়িয়ে স্বীকার করেছিলাম সর্বত্র ।

যখন জিজ্ঞাসা করেছিল ভিটাহীন পিতৃ পরিচয়হীন ব্যক্তিত্ব কোন দরকার নেই ।
গৃহহীন সন্ন্যাসীর জীবনের যাপনের কোনও প্রয়োজন নেই ।
পাগল পরাধীনতায় আক্রান্ত অসুস্থ লোকের কোনও নিস্তার নেই ।

ওরা কি জানে ?
পত পত করে উড়ছি আমি সারা বেলা ।
সূক্ষ্ম বাতাসে বইছি নিরালা ।
নির্মল পরিবেশের নানা রকম ফুলেল গন্ধে ভাসছি ডুবছি এবেলা ওবেলা ।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই পতাকা ।
আমি পতাকা রূপ ছালাম বরকত জব্বারের ছেলে বেলা ।
আমি পতাকা রূপ লাখো শহিদের হানাদার বাহিনীর উপর হামলা ।
আমি পতাকা রূপ রক্তে মাখামাখি শেখ মুজিবের ঘরের জানালা ।
আমি পতাকা রূপ লাখো ধর্ষিত শহীদ নারীর লীলা ।
আমি পতাকা রূপ বুক খালি মায়ের উঠান আর সাঁঝের বেলা ।
আমি পতাকা রূপ মসজিদের ইমাম হিন্দুদের হাতের কুলা ।
আমি পতাকা রূপ মাঝির বৈইঠা গ্রাম্য ফকিরদের ঝোলা।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই পতাকা ।
আমি সেই বুড়িগঙ্গার মতো মুক্তিযোদ্ধার রক্তের সাগর ।
আমি সেই মুক্তিযুদ্ধে ছেলে হাড়ানো কান্না জরিত মায়ের আদর ।
আমি সেই সদ্য বিবাহিত বিধবা বোনের গাঁয়ের চাদর ।
আমি সেই বৃদ্ধ বয়সী দাদুর মৃত দেহের এলোমেলো কবর ।
আমি সেই মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারীর এক তিলক সিঁদুর ।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই রক্তকবরী সাহসী যাত্রা পালা ।
আমি সেই ছোট্ট শিশুর সজাগ করানো সাহসী হাতে বাজানো থালা ।
আমি সেই কর্কটে খিটখিটে রগরগে বুড়োর বাঁশিওয়ালা ।
আমি সেই টিয়ে পাখির ছোট ছোট সাহসী সাবধানের কথা বলা ।
আমি সেই এক পোশাকি সন্ন্যাসী জয়গানেথ অনুপ্রেরণার সেঁতারা আর বেহালা ।

ওরা কি জানে ?
আমি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ।
আমি স্বাধীনতা দিবস ।
আমি বিজয় দিবস ।
আমি লক্ষ্য কোটি মায়ের বুক খালি করে স্বাধীনতা এনেছি ।
আমি শত শত বোনের সিথির সিঁদূর মূছে মাতৃভাষা এনেছি ।
আমি হাজার হাজার পিতার স্বপ্নকে ধ্বংস করে বিজয় এনেছি ।
আমি অগুনতি যুবকের তাজা রক্তের বিপরীতে দেশক ছিনিয়ে এনেছি ।

আমি !আমি সেই পতাকা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে সিথির সিঁদূর মুছে অন্যত্র চলে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে দাড়ি গোঁফ ফেলে মুখোশে ডেকে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে স্বর বর্ণ ছেড়ে বিদেশি ভাষায় যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে শেষ বারের মতো মাথা নিচু করে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে ঘর বাড়ি ছেড়ে বনবাসে চলে যা ।
বাংলার দালাল ।মাতৃভাষার দালালেরা।দেশের শত্রুরা ।

কি বুঝতে পারছিস ?
বুঝে না থাকলে বল ।
আমি আছি শত রূপে শত শত কন্ঠে ।
আমি আছি থাকব শত শত যুবকের তাজা বাহুতে ।
আমি জেগে আছি শত শত তরুণের রক্তে আঁকা ।
আমি সেই পতাকা ।

No comments:

Post a Comment

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি