ব্লগ সম্পর্কিয় কথা

স্বরচিত কবিতা এবং অনুগল্প পাঠান , সপ্তাহের সেরা নির্বাচিত লেখাগুলো ব্লগে পোস্ট করা হবে।

Wednesday 3 October 2018

ঢেউ

ঢেউ
দিবাকর মন্ডল

আমার এই দুটো চোখ তোমার মনের কথা পড়ে ফেলেছে

যে কথার অক্ষরগুলো তুমি লিখেছিলে জলের গায়ে

চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে ঢেউয়ে মিলিয়ে গেছে।

তোমার ছায়া পূর্ণিমার আলোয় আমার ছায়ার সঙ্গে মিশে গেছে।

একটুও টের পেলে না

এই নীরালায় নদীতীরে আমার সঙ্গে মিশবে বলে পাগলপারা

মোহময়ী রাত, জোনাকির আলো তোমার শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছে অদ্ভুত স্পন্দন

মিলনের নেশায় কেমন মাতাল হয়ে উঠেছ

তাই এলোমেলো স্পর্শে হাতড়ে বেড়াচ্ছ আমাকে।

অথচ আমার ছায়া তোমার ছায়ার সঙ্গে মিশে আছে তীরে

যেখানে ঢেউ এসে অবিরাম দোলা দিচ্ছে

ছায়া দুটো ভাসছে

আর আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে গভীর জলের দিকে।

সুদ আসল

সুদ আসল
~ইন্দ্রাণী ঘটক

হারিয়ে যেতে যেতে এক সময় জুতোর কোণায় পৌছে যায়
ধুলোর মতো মুছে ফেলে বাড়ি ফেরা

ফেসবুকে তরুণীর ছবিতে আদর, কিমবা
হোয়াট্সঅ্যাপে একটু কথা

সময় নিজের হিসেবের ঠিক
ভুলে ভরা বার্ধক্য যন্ত্রণা

গোলদারি খাতায় কাটাকুটি খেলা
আর খোলা পাতায় গোলদারি

ইন্দ্রাণী ঘটক

যখন আমি থাকব না

।।যখন আমি থাকবো না।।
~ দীপ্তি মৈত্র

যখন আমি থাকবোনা আর এইখানে
কণ্ঠ আমার থাকবে বেঁচে টেপ গানে।
সময়  পেলে শুনবে কথা প্রাণ ভরে,
দু' চার ফোঁটা অশ্রু বুঝি পড়বে ঝরে।
সোহাগ স্নেহের ওজনদাঁড়ি ব্যস্ত রবে
যখন আমি থাকবো না আর এই ভবে।
ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা রইবে পড়ে,
এদিক সেদিক অবিন্যস্ত শূন্য ঘরে।

তার জন্য


তার জন্য :
           - - - - - পাবকশুদ্ধা হাজরা দত্ত
----------------------------------

ওরা তোমাকে এত ভালোবাসে জেনে, তৃপ্তি হয় এবং অহংকারও।
এতজনের এতগুলো মন তুমি কত সুন্দর গুছিয়ে রাখতে পারো।

আমি তো একেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই।
যদিও জানি না এক নাকি আধখানা...
তোমার মতো হতে তো আমিও চাই।
যদিও জানি, তা একদমই পারবো না।

তোমার মন তো ভীষণ রকম দৃঢ়...
এত ভালোবাসা.. তাও তো দিব্যি রয়।।
কি জাদুতে তুমি মন্ত্রমোহিত করো...
তোমায় দেখেই আমার কেমন হয়...।

আমি শাড়ি আর তুমিও পাঞ্জাবীতে
তবু জানি, তুমি দৃকপাত করবে না।
আমার প্রেমের ঘোরলাগা বিন্দিতে,
তোমার শাণিত যুক্তিরা থামবে না।

প্রয়োজন হলে কাছে ডেকে নাও তুমি...
সামলাতে বলো এক কিবা দুটো কাজ..
আমিতো তোমার সামনেতে থেকে দেখি,
তোমার অরুণ কিরণ স্বরূপ সাজ।।

ব্যালকনি জুড়ে রাত নেমে আসে গাঢ়
তোমার সে কাজে ভুলত্রুটি কিছু হলে...
ব্যর্থতা গুলো শোধরাতে থাকি আরও,
শুধু তোমাকে হাসতে দেখবো বলে।

ভালোবাসি কিনা জানি না গো সুন্দর...
আমি শুধু জানি, আমি অন্যের নয়।
তোমার মনের শতবিভাজন পরও
তোমাকে দেখেই আমার কেমন হয়।।

Thursday 27 September 2018

পতাকা

পতাকা
মোঃ মাসুদ রানা

আমি সেদিন রক্তাক্ত হয়েছিলাম ।
খুব আঘাতে বুকের পাঁজর গুলো হাঁকডাক করছিল ।
গোটা শরীর নিস্তেজ নিস্তব্ধ হয়ে অচল হয়েছিল ।
মাথা গুড়ে বারবার দুনিয়া ওলটপালট লাগছিল ।
হঠাৎ থমকে গিয়ে উৎকন্ঠা হয়ে দেহ কাঁপছিল ।
এলোমেলো ভরাডুবির চিন্তাভাবনায় নিজ প্রাণ অকেজো ছিল ।
ডুবন্ত রক্তকণা বারবার দেহ থেকে অপসারিত হতে চাইছিল ।
যেদিন ,আমাকে না চিনে জানতে চেয়েছিল পরিচয় ।
জানতে চেয়েছিল আমার জন্মভূমি ।
জানতে চেয়েছিল আমার মাতৃভূমি ।
জানতে চেয়েছিল পিতৃভূমী ।

আমি খুব মর্মান্তিক মর্মাহতে দুঃখে কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ ।
শোকের ছায়ায় চোখের পর্দাগুলোকে ধরে রাখতে পারিনি বেশিক্ষণ ।
ক্ষোভে দগ্ধ হয়ে শুকনো পাতায় পুড়েছি অনকটা ক্ষন ।
তিক্ত হয়ে গুলির মতো জর্জরিত হয়েছি সারা সন্ধ্যে ক্ষন ।

যেদিন আমাকে অযথা প্রশ্নে পরীক্ষা করে জানতে চেয়েছিল আমি এসেছি কোত্থেকে ।
জানতে চেয়েছিল নীরবতায় নিমজ্জিত নিস্ফলক আবেগকে ।
জানতে চেয়ছিল আমার উৎসের উৎপত্তির সন্ধিক্ষণকে ।

আমি খুব বিচলিত বিস্কোরণের রোগে রোগান্নিতে আক্রান্ত হয়ে পরেছিলাম ।
দূগন্ধে পঁচা মৃত শালিকের মতো দাঁড়িয়েছিলাম।
কর্কট কন্ঠে কথা শুনতে ভেজা বিড়াল সেঁজেছিলাম।
চক্ষু লজ্জায় রাগ ভেসে ওঠার উপক্রম অবস্থা হজম করছিলাম ।
ক্রদে ক্লান্তে অজান্তে অসমাপ্তে নিজেকে সান্ত্বনায় বশ করছিলাম ।

যখন বলেছিল ধর্ষিত ধর্ষিতার কোনও ঠাই নাই এ কুঁড়েঘরে।
ঠাই নাই ঠাই নাই এই
মাঠ ফসল আর গবাদি পশুর চরে ।
ঠাই নাই এই নদী মাতৃক দেশের কূল কিনারে ।

আমি তখনও মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে কন্ঠস্বর নামিয়ে ধৈর্য ধারনে ব্যস্ত ।
শর্তহীন বক্তব্যের আগাছার আবর্জনার স্তূপ হয়ে নিজেকে রেখেছিলাম ন্যস্ত ।
আঙুল নাড়ানোর ইশারার ইতিবস্তর চোখ রাঙানো ভাষ্যগুলোয় ছিলাম পরাস্ত ।
হুমকি ধামকির উন্নয়নের উপর্যুপরিতে ঘাড় নাড়িয়ে স্বীকার করেছিলাম সর্বত্র ।

যখন জিজ্ঞাসা করেছিল ভিটাহীন পিতৃ পরিচয়হীন ব্যক্তিত্ব কোন দরকার নেই ।
গৃহহীন সন্ন্যাসীর জীবনের যাপনের কোনও প্রয়োজন নেই ।
পাগল পরাধীনতায় আক্রান্ত অসুস্থ লোকের কোনও নিস্তার নেই ।

ওরা কি জানে ?
পত পত করে উড়ছি আমি সারা বেলা ।
সূক্ষ্ম বাতাসে বইছি নিরালা ।
নির্মল পরিবেশের নানা রকম ফুলেল গন্ধে ভাসছি ডুবছি এবেলা ওবেলা ।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই পতাকা ।
আমি পতাকা রূপ ছালাম বরকত জব্বারের ছেলে বেলা ।
আমি পতাকা রূপ লাখো শহিদের হানাদার বাহিনীর উপর হামলা ।
আমি পতাকা রূপ রক্তে মাখামাখি শেখ মুজিবের ঘরের জানালা ।
আমি পতাকা রূপ লাখো ধর্ষিত শহীদ নারীর লীলা ।
আমি পতাকা রূপ বুক খালি মায়ের উঠান আর সাঁঝের বেলা ।
আমি পতাকা রূপ মসজিদের ইমাম হিন্দুদের হাতের কুলা ।
আমি পতাকা রূপ মাঝির বৈইঠা গ্রাম্য ফকিরদের ঝোলা।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই পতাকা ।
আমি সেই বুড়িগঙ্গার মতো মুক্তিযোদ্ধার রক্তের সাগর ।
আমি সেই মুক্তিযুদ্ধে ছেলে হাড়ানো কান্না জরিত মায়ের আদর ।
আমি সেই সদ্য বিবাহিত বিধবা বোনের গাঁয়ের চাদর ।
আমি সেই বৃদ্ধ বয়সী দাদুর মৃত দেহের এলোমেলো কবর ।
আমি সেই মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারীর এক তিলক সিঁদুর ।

ওরা কি জানে ?
আমি সেই রক্তকবরী সাহসী যাত্রা পালা ।
আমি সেই ছোট্ট শিশুর সজাগ করানো সাহসী হাতে বাজানো থালা ।
আমি সেই কর্কটে খিটখিটে রগরগে বুড়োর বাঁশিওয়ালা ।
আমি সেই টিয়ে পাখির ছোট ছোট সাহসী সাবধানের কথা বলা ।
আমি সেই এক পোশাকি সন্ন্যাসী জয়গানেথ অনুপ্রেরণার সেঁতারা আর বেহালা ।

ওরা কি জানে ?
আমি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ।
আমি স্বাধীনতা দিবস ।
আমি বিজয় দিবস ।
আমি লক্ষ্য কোটি মায়ের বুক খালি করে স্বাধীনতা এনেছি ।
আমি শত শত বোনের সিথির সিঁদূর মূছে মাতৃভাষা এনেছি ।
আমি হাজার হাজার পিতার স্বপ্নকে ধ্বংস করে বিজয় এনেছি ।
আমি অগুনতি যুবকের তাজা রক্তের বিপরীতে দেশক ছিনিয়ে এনেছি ।

আমি !আমি সেই পতাকা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে সিথির সিঁদূর মুছে অন্যত্র চলে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে দাড়ি গোঁফ ফেলে মুখোশে ডেকে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে স্বর বর্ণ ছেড়ে বিদেশি ভাষায় যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে শেষ বারের মতো মাথা নিচু করে যা ।
চলেই যদি যেতে হয় তবে ঘর বাড়ি ছেড়ে বনবাসে চলে যা ।
বাংলার দালাল ।মাতৃভাষার দালালেরা।দেশের শত্রুরা ।

কি বুঝতে পারছিস ?
বুঝে না থাকলে বল ।
আমি আছি শত রূপে শত শত কন্ঠে ।
আমি আছি থাকব শত শত যুবকের তাজা বাহুতে ।
আমি জেগে আছি শত শত তরুণের রক্তে আঁকা ।
আমি সেই পতাকা ।

সর্বহারা

সর্বহারা
   __অমৃত দে

আইবুড়ো গন্ধে মাতাল রাত
সর্বস্ব গিলেছে--------
সর্বহারা হয়েও পায়নি কোনো
সমবায় ঋণ ।
হয়তো এই পৃথিবী আমার জন‍্য নয় !
অনুভবের কোশে কোশে তুমি
ঝড়ে পরে তিক্ত সম্ভবনা ।
জনঅরণ্যে বউ কথা কও ডাকে
আমার উন্নত মলাটের জীবনিকাব‍্য
শুকনো পাতার মতো
ইতিহাস হয় ভোরের দধিমঙ্গলে ।
গেঞ্জিতে গ্রাস বেঁধে----------ছুটেছি
সে মহাকাব‍্য গোপনে অবহেলা
হৃদয়ের ভালোবাসার কালিতে
কলম রাঙিয়ে কাটে সন্ধ‍্যাবেলা  ।
সব স্বপ্ন শেষ হয়ে এলেও
শান্ত দুপুরে ঝিঁ ঝিঁ দের ডাক
আর কোকিলের কুহুতান
যুগান্তের অভিমানে হৃৎপিণ্ডের টান ।।

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি
~পল্লবী সমাদ্দার

সাত্যকি অফিসের ডেস্ক টা পরিষ্কার করতে করতে এক ফাঁকে দেখে নিল মোবাইলে কত পারসেন্ট চার্জ আছে! ওদিকে পাওয়ার ব্যাঙ্কটা চার্জ হচ্ছে. পাওয়ার ব্যাঙ্কটা লাল থেকে সবুজ হলেই মোবাইল টা চার্জে বসাবে. মোবাইলে চার্জ ২০% এর নীচে নেমে গেলেই সাত্যকির অস্বস্তি হতে থাকে. এ এক অদ্ভুত ব্যামো. মোবাইল ছাড়া তার এক সেকেন্ড - ও চলে না. মেহুলী মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে রেগে মেগে বলে " মোবাইল টাই তো তোর গার্লফ্রেন্ড, আমার কি বিশেষ কোনো দরকার আছে?'. তাতে অবশ্য সাত্যকি খানিক লজ্জা বোধ করে, লাজুক হাসি হেসে মোবাইল সরিয়ে রাখে একপাশে. ৫ মিনিট যেতে না যেতেই যে কে সেই, লম্বা লম্বা আঙুল গুলো অভ্যেসবশেই কি-লক খুলে ফেলে.এই অ্যাপ সেই অ্যাপে ঘুরতে থাকে আঙুল .  ৫:৩০ টা বাজতেই সাত্যকি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ঝটপট উবার বুক করে. আজ তার বিশেষ তাড়া আছে. ফাইন আর্টস গ্যালারীতে আজ মেহুলীর কিছু ছবির এক্সহিবিসন আছে. আজ-ই শেষদিন , তাই সময়মত পৌছতে না পারলে মেহুলী হুলীগান হয়ে গান  টান-ও চালিয়ে দিতে পারে. এইসব ভাবতে ভাবতে সাত্যকির জন্য ক্যাব চলে আসে. এক্সিহিবিসন ছাড়াও আরো একটি কারণে আজ তার বিশেষ তাড়া. অনেকগুলো টাকা খরচ ক'রে সাত্যকি তার নতুন ফ্ল্যাটে আজ ডিজিটাল লক ইনস্টল করতে চলেছে, রাতে সেই সিস্টেম ইনস্টল করতে দুজন লোক আসার কথা. ডিজিটাল সিস্টেমের মজাটা হোলো সেটা মোবাইল থেকে অপারেট করা যাবে. মানে সেন্সর লাগানো ডিভাইস, যার ৫০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল নিয়ে এলেই ডিভাইস সেন্স করতে পারে মোবাইল -এর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি. তারপর প্রোগামিং করা নম্বরে আঙুল ছোঁয়ালেই হোলো. এতকিছু শুনে মেহুলী বলেছিল " একেই তো তুই মোবাইল অন্ত প্রাণ তার ওপর আরো একটা ডিপেন্ডেন্সি বাড়াচ্ছিস ".

ফাইন আর্টস গ্যালারীর গেট দিয়ে ঢুকতেই মেহুলীর দেখা মিলল. "তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, দেরী করছিস দেখে ভাবলাম আসবি না বোধহয়".

- সাত্যকি মিচকি হেসে উত্তর দিল " না এলে ধরণী দ্বিধা হতে বাকি থাকত বলতে চাইছিস?"

-মেহুলী কপট রাগ দেখিয়ে বলল " বাজে বকিস না ভেতরে চল, ভেতরে তোর সাথে আর বেশী কথা হবে না, আজ দুজন আর্ট কিউরেটর আসার কথা, তাদেরকে কনভিন্স করতে পারি কিনা দেখি".

সাত্যকি আর মেহুলী দুজনে একসাথে গ্যালারীতে ঢোকে. মেহুলী অন্য অনেকের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে. সাত্যকি একা একা ঘুড়ে ছবি গুলো দেখতে থাকে. কিছু নামী শিল্পীদের ছবির সাথে মেহুলীর গোটা দশেক ছবি প্রদর্শিত. সাত্যকি খুঁজে খুঁজে সেগুলোই বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে. ছবি টবির ব্যাপারে সাত্যকির জ্ঞান খুবই সীমিত. মর্ডাণ আর্ট-এর তো কিছুই সে বুঝতে পারে না. ইদানীং তো বই পড়ার অভ্যেস টাও গেছে. কিন্ডেলে কখোনো সখোনো পড়ে বটে. কিন্তু তাও খুব-ই কম. মেহুলীর ক্রিয়েটিভ সিগনেচার করা ছবি হঠাৎ দেখতে পেয়ে খুব আনন্দ হোলো সাত্যকির. মেহুলীর ছবি গুলো দেখতে দেখতে তার মনে হচ্ছিল ৪ টে ছবির থিম খানিকটা একরকম. একটি ছবিতে অনেকগুলো নিউরোন , ছন্নছাড়া, বিক্ষিপ্ত, নীল বা ধূসর রঙের. উজ্জ্বল রঙের তরন্গ দৈর্ঘ্যের মত দেখতে তুলির টান সারা ক্যানভাস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে. তরন্গ গুলো বেরোচ্ছে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মত দেখতে একটা কিছু থেকে, ডিভাইস টা অনেক টা মোবাইল ফোনের মত দেখতে লাগছে. কোনো কোনো নিউরোন আবার ছিড়ে খুড়ে গেছে. আর একটি ছবিতে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে আষ্টেপৃষ্ঠে আকড়ে ধরেছে দুটো হাত , সেই হাত গুলো একটি ছোট্ট মোবাইল থেকে বেড়িয়ে বৃহদাকার হয়েছে. পরের ছবিতে পিনিয়াল গ্ল্যান্ড মানে ঠিক দুই ভ্রুর মাঝখানে একটি ছোট্ট ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মত দেখতে কি জানি কি! দূরে দরজায় তালা আটকানো. হঠাৎ মেহুলী এসে পিছনে দাঁড়ায়, "বাব্বা এখোনো আছিস ,চলে যাসনি যে!"

-"কিসব একেছিস হুলীগান? মাথা মুন্ডু কিছুই তো বুঝতে পারছি না!"
-"যেখানে সেখানে আমায় হুলীগান ব'লে ডাকিস নাতো! কি ভাব্বে লোকে! " - বলেই আশে পাশে একটু দেখে নেয় মেহুলী.
সাত্যকি হাসতে হাসতে বলে "জলদি বোঝা এগুলোর মানে কি!"
মেহুলী সাত্যকির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে "আরে তুই নিজের সাথে মিল পাচ্ছিস না?"
সাত্যকি মাথা টাথা চুলকে " যাহ্ ত্তারা আমি আবার কোত্থেকে এলুম! কিসব যে বলিস তোরা শিল্পী মানুষ কিসুই বুঝি না, আমি হলাম গিয়ে সফ্্টওয়ারের লোক, এসব বোঝা কি আমার কম্ম!!"
-"ঠিক আছে পরে বোঝাবো তোকে, আমি বরং একটু ওইদিকটায় যাই, তুই কি এখুনি বেরোবি!"

সাত্যকি মোবাইলে সময় দেখে নিয়ে ক্যাব বুক করে. এখনো হাতে ১ ঘন্টা মত সময় আছে. এখান থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই বাড়ি পৌছে যাবে আশা করা যায়. সাত্যকি ফোন করলে তারা বাড়িতে এসে সিস্টেম ইনস্টল করে যাবে -এইরকম কথা হয়েছিল.
মোবাইলে কি-লক খুলে ফোন নম্বরটা খুঁজতে থাকে সাত্যকি. কল লিস্ট টা কেমন মনে হচ্ছে  বদলে গেছে, যাদের সকাল থেকে কল করেছিল তাদের কারোর নম্বর খুঁজে পাচ্ছে না, সকালেই তো ফোন করেছিল লোকটাকে. ফোন রি-স্টার্ট করে. আবারো কল লিস্ট বদলে গেল, এবার অন্যান্য সব নম্বর. কি যে হোলো মোবাইল টার, দুমাস আগেই তো কেনা হোলো! সাত্যকি নম্বরটা মনে করার চেষ্টা করে. নাহ্ কিছুতেই মনে পড়ছে না. সেই যে ল্যান্ড লাইনের যুগে নম্বর মুখস্থ থাকত ,মোবাইল আসার পর সেসব পাট চুকে গেছে. আরো একবার সাত্যকি কল লিস্ট ঘাটে, আবারো বদল ঘটেছে সেটার. একি! কল লিস্ট জুড়ে সব পুরোনো ল্যান্ড লাইন নম্বর! এগুলো তো তার মোবাইলে কখনো সেভ করাই ছিল না. সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে. এক ঘন্টা পেরিয়ে যায় , সাত্যকি নম্বর খুঁজে পায় না. মনসংযোগ করে নম্বর মনে করার চেষ্টা চালায়, কিন্তু তাও পারে না. মোবাইল টা কেমন কেঁপে উঠল মনে হল. কিন্তু ভাইব্রেশন মোডে তো নেই. কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হোলো কে যেন হাসছে. হাসির আওয়াজ টা পেল সাত্যকি , কিন্তু কোথা থেকে আসছে কিছুই বুঝতে পারছে না. ওদিকে সময় পেড়িয়ে যায়, ডিজিটাল ডোর লক ইনস্টলেশন আর করা হয় না. ল্যাপটপ টাও আজ সে অফিসে রেখে এসেছে তাড়াহুড়োয়. কাল ভোরে অনসাইট থেকে এক ক্লায়েন্টের ইম্পর্ট্যান্ট কল রিসিভ করতে হবে . অ্যালার্ম না দিলে অত ভোরে সাত্যকি উঠতে পারে না. মোবাইলে অ্যালার্ম দিতে গিয়ে দেখে মোবাইল অন হচ্ছে না. মহা জ্বালা তো! মোবাইল টা কি আবারো একটু কেঁপে উঠল? আবার সেই বিচ্ছিরি হাসির শব্দ - "খ্যাঁক খ্যাঁক" , কোত্থেকে যে আসছে, কিছুই বুঝতে পারছে না সাত্যকি.

ক্লান্ত বিষণ্ণ শরীরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল সাত্যকি, মনে নেই. মাঝরাতে হঠাৎ হিস্ হিস্ শব্দে ঘুম ভাঙে তার. মোবাইল টা মাথার কাছে দপ্ দপ্ করছে, শব্দটা কি ওটা থেকেই আসছে! অন্ধকারেই মোবাইল টা হাতে নেয় সাত্যকি, কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোথাথেকে দুটো হাত এসে সাত্যকির মাথা চোখ মুখ কান চেপে ধরে. সাথে গা শিউরানো হিস্ হিস্ আওয়াজ, "খ্যাঁক খ্যাঁক "- বিদ্রুপাত্মক হাসি. ছটফট করতে থাকে সাত্যকি, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না. মেহুলীর আঁকা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ছবি, উজ্জ্বল রঙের তরন্গ দৈর্ঘ্যের ছবি মনে পড়তে থাকে সাত্যকির. প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে সে, কিছুতেই পারছে না, শ্বাস আটকে আসছে যেন, পারছে না কিছুতেই ছাড়াতে, কিছুতেই পারছে না.

সুগঠনবিশিষ্ট পোষ্টগুলি